পশ্চিম মেদিনীপুর,নিজস্ব সংবাদদাতা :মাত্র ৫ বছর আগেই ক্ষমতা আর প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কার্যত গায়ের জোরে একের পর এক পঞ্চায়েত দখল করার অভিযোগ উঠেছিল, রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। ঠিক পাঁচবছর পেরিয়ে এসে আরো এক পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, বঙ্গ রাজনীতির মঞ্চে যেন উলটপুরাণ শুরু হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ থেকে আবাস যোজনা, গত ৫ বছরেএকের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়ে, তৃণমূল কংগ্রেসের একের পর এক নেতামন্ত্রী সাংসদ আর বিধায়ক, আপাতত সিবিআই বা এদের হেফাজতে রয়েছেন। অনেকেই আদালতের নির্দেশে জেলবন্দী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এমনই পরিস্থিতিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, ভাবমূর্তি রক্ষা করতে, নতুন এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু জেলায় জেলায় ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নামে সেই প্রকল্পের প্রচার করতে গিয়ে, কখনও সাধারণ মানুষ, কখনও আবার দলের নীচুতলার কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন, ‘দিদির দূত’ হিসেবে গ্রামে গ্রামে যাওয়া, তৃণমূলের নেতামন্ত্রী আর সাংসদ বিধায়করা। এবার সেই ক্ষোভের প্রকাশেই নয়া মাত্রা যোগ হল, পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকে। মাঝরাতে চোর সন্দেহে পাকড়াও করে, রীতিমত গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হল, সেখানকার এক তৃণমূলের বুথ সভাপতিকে। আর এই ঘটনায় পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে, বিজেপির স্থানীয় ৫ কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে দাবি, রবিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের ১৩ নম্বর বাখরাবাদ অঞ্চলের তেগেড়িয়া এলাকা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময়, রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে কিছু একটা আওয়াজ পেয়েছিলেন, মনিরাজ গ্রামের বাসিন্দা মদন দাস নামে, তৃণমূলের এক বুথ সভাপতি। সেটি কোনও জন্তুর আওয়াজ ভেবে তাকে ধরতে গিয়েছিলেন, তৃণমূল নেতা মদন দাস। তাঁর দাবি, ঠিক তখনই সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়া স্থানীয় কিছু বিজেপিকর্মী চোর চোর বলে তাড়া করে, তাঁকে ধরে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এরপর তাঁকে বেধরক মারধর করা হয় বলে, পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, ওই তৃণমূল নেতা। ঘটনার জেরে চোখে মুখে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে, আপাতত বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, মদন দাস। হাসপাতালে শুয়েই তিনি অভিযোগ করেন,এলাকার বিজেপিকর্মীরা আগে থেকে পরিকল্পনা করেই, তাঁর ওপর এই প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে ঘটনার কথা আংশিক স্বীকার করে নিয়েও, বিজেপির নারায়ণগড় মধ্যমণ্ডলের সভাপতি সমীরণ বাড়ুইয়ের পাল্টা দাবি, দলেরই এক কর্মীর বাড়িতে রবিবার রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে খাওয়াদাওয়া করে ফিরছিলেন কয়েকজন বিজেপি কর্মী। সেই সময় তাঁরা দেখেন, এক ব্যক্তির বাড়িতে চুরি করে বেরিয়ে আসার সময়, ওই তৃণমূল নেতাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে মারধর করছেন, কয়েকজন গ্রামবাসী। কিন্তু গ্রামের বেশিরভাগই বাসিন্দাই বিজেপির সমর্থক হওয়ার কারণে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শুধুমাত্র তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতেই, পুলিশ একতরফা তাঁদের দলের কর্মীদেরকেই গ্রেফতার করেছে।রবিবার রাতে এই ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছে বেলদা থানার পুলিশ। জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃতত পাঁচ বিজেপি কর্মীকে, সোমবার দাঁতন আদালতে পেশ করা হয়।