ইভিএম নিউজ ব্যুরো,২৪ ফেব্রুয়ারিঃ আকাশে অনেক উঁচুতে একটা বিন্দু। খালি চোখে তার অস্তিত্ব বোঝা প্রায় অসম্ভব। সেনাবাহিনীর রাডারে ধরা পড়ে অবশ্যই। বিমান বা হেলিকপ্টারও স্পষ্ট দেখতে পায়। আসলে এইসব বেলুন কোনো সাধারণ বেলুন নয়। নজরদারি বেলুন। বা আরো গোদা বাংলায় বললে, গোয়েন্দা বেলুন। কিন্তু এই আধুনিক যুগে, কৃত্রিম উপগ্রহর যুগে বেলুন দিয়ে গোয়েন্দাগিরি? ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আসলে বেলুন দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করার অনেক সুবিধা।

প্রথমত:, একটি কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করে মহাকাশে পাঠাতে যে খরচ, সেই খরচে হাজার খানেক গোয়েন্দা বেলুন ওড়ানো যায়। আর কৃত্রিম উপগ্রহ যদি জিও স্টেশনারি অরবিট অর্থাৎ ভূ-সমলয় কক্ষে থাকে, তবেই কোন একটি বিশেষ অঞ্চলের ওপর একটানা বেশ খানিকক্ষণ নজরদারি করা সম্ভব। না হলে কোন একটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সামান্য সময় টুকুতেই মাত্র গোয়েন্দাগিরি সম্ভব। কারণ ভূ-সমলয় কক্ষ যা মাটি থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে, সেখানে যে উপগ্রহগুলো থাকে সেগুলো পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে চমৎকার তাল রেখে চলতে পারে। কিন্তু শুনলে আশ্চর্য হবেন, তাও সেগুলো বেলুনের মতো কার্যকরী নয়। কারণ বেলুন করে মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে যায়। এবং কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উপর তাকে দীর্ঘক্ষণ, এমনকি বেশ কয়েক দিন রাখা যায়।

বেলুন গোয়েন্দা ঠিক কি কি কাজ করতে পারে? একটি গোয়েন্দা উপগ্রহে গোয়েন্দাগিরির জন্য যা সরঞ্জাম থাকে তার সবকিছুই থাকতে পারে বেলুনে । গোয়েন্দা উপগ্রহে এমন ধরনের ক্যামেরা থাকে, যা মাটির উপর ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা একটি কাঠিও যদি পুঁতে দেওয়া হয়, তাহলেও তার নিখুঁত ছবি তুলতে পারে। এমন ধরনের এক্সরে ক্যামেরা থাকে, যা মাটির নিচে বা পাহাড়ের গভীর গুহায় থাকা শত্রুপক্ষের সামরিক ঘাঁটি কেও চিহ্নিত করতে পারে। এই ধরনের ঘাঁটিগুলোতেই সাধারণত পরমাণু অস্ত্র সম্ভার লুকিয়ে রাখা হয়। এমনকি গভীর জঙ্গলের ভেতরে ক্যামোফ্লেজ করে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র সম্ভারের হদিশও পাওয়া সম্ভব হয়। দিনে, রাতে যে কোন সময় । এই সব ধরনের ক্যামেরা গোয়েন্দা উপগ্রহে থাকে। এই সমস্ত ক্যামেরাই থাকে গোয়েন্দা বেলুনেও। আর যেহেতু কৃত্রিম উপগ্রহর তুলনায় অনেক নিচে থাকে এই বেলুন এবং প্রয়োজনে অনেকক্ষণ ধরে একটি নির্দিষ্ট জায়গার উপর দিয়ে উড়তে পারে, তাই কৃত্রিম উপগ্রহের তুলনায় বেশি নিখুঁত হয় গোয়েন্দা বেলুনের তোলা ছবি।

আরো এক মারাত্মক সুবিধা আছে। ‘চোখ’-এর সঙ্গে সঙ্গে খুব সাংঘাতিক ‘কান’ও থাকে বেলুনের। এক্ষেত্রেও সেই কৃত্রিম উপগ্রহের টেকনোলজি। কৃত্রিম গোয়েন্দা উপগ্রহের এমন সব যন্ত্র আছে, যাদের অদ্ভুত কান, মানে শুনতে পাওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। মাটির কয়েকশো কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া গোয়েন্দা উপগ্রহ চাইলে আপনার এবং আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন শুনতে পারে এবং রেকর্ড করতে পারে। যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, এটাই সত্যি। গোয়েন্দা বেলুনেও ব্যবহৃত হয় সেই একই টেকনোলজি। এর ফলে গোয়েন্দা বেলুন এর মাধ্যমে কোন এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের, এমনকি সেনাবাহিনীর বা গোয়েন্দাদের কথোপকথন শোনা যায় অনেক সহজে।

চীনের গোয়েন্দা বেলুন বা তার অব্যবহিত পরেই একটি রুশ গোয়েন্দা বেলুন নিয়ে প্রচুর হৈচৈ হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হলো, পৃথিবীর অগুন্তি দেশ আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের নামে বহু ক্ষেত্রেই গোয়েন্দাগিরি চালায় অন্য দেশের ওপর। এমনকি এরকম বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা বেলুন ভারতের হাতেও রয়েছে এবং সেগুলো কাজেও লাগায় ভারতীয় সেনাবাহিনী – এরকমই মনে করেন আন্তর্জাতিক সামরিক পর্যবেক্ষকরা।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর