শিবশংকর চট্টোপাধ্যায়, বালুরঘাট, ২৭ ফেব্রুয়ারিঃ কখনও গরু, তো কখনও আবার বালি বা পাথর। একের পর এক চুরি আর পাচারের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে বারবার শোরগোল উঠেছে, গত কয়েকবছরে। আবার সেই শোরগোল মিলিয়ে যেতে না যেতেই, শিক্ষায় নিয়োগদুর্নীতির জেরে আরও প্রবল শোরগোল শুরু হয়েছে, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই। একের পর এক এহেন চুরির তালিকায় যোগ হয়েছে, খাসজমি থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ত্রাণ, নদীতীরের বালিয়াড়ি থেকে সরকারি প্রকল্পের গাছ, এমনকী রাস্তাও। আর এবার সেই চুরির তালিকায় যোগ হল, সরকারি নিকাশিনালাও।
কীভাবে? তাহলে শুনুন। বরাদ্দের সরকারি টাকায় নর্দমা নির্মাণের কাজ শেষ না করেই, প্রকল্প এলাকায় একটি পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেলেন, বরাত পাওয়া ঠিকাদার। ঘটনা জানাজানি হতেই তুমুল হইচই শুরু হয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামের বালুরঘাট ব্লকের পতিরাম গ্রামপঞ্চায়েতের কাছারিপাড়া এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথম থেকেই ড্রেনের কাজ নিয়ে তাঁদের অন্ধকারে রেখেছিল ঠিকাদার। এরপর আচমকাই সেখানে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে, সে বেপাত্তা হয়ে গেছে। আর এতেই বাতাসে উড়ছে প্রশ্ন। স্থানীয়দের একাংশের সন্দেহ, এলাকার শাসকদলের নেতাদের কাটমানি দিতে গিয়ে, নর্দমা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি বরাদ্দের টাকা খরচ হয়ে যাওয়াতেই, এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ওই ঠিকাদার।
সূত্রের খবর, বালুরঘাট ব্লকের পতিরাম গ্রামপঞ্চায়েতের কাছারিপাড়া এলাকায়, সম্প্রতি একটি নিকাশি নালা নির্মাণের জন্য, প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদ। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি ওই নির্মাণকাজের কোনও সময়সীমাভিত্তিক অগ্রগতির কথা লিখিতভাবে জানাচ্ছিলেন না, প্রকল্পের বরাত পাওয়া ওই ঠিকাদার। এরপর রাতারাতি একটি বোর্ড ঝুলিয়ে চলে যান কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার। এরপরই রবিবার সকালে প্রকল্প এলাকায় একটি সাইনবোর্ড দেখে চোখ কপালে ওঠে, স্থানীয় বাসিন্দাদের। লেখা ছিল, পতিরামের তৃপ্তি হোটেল থেকে নদী পর্যন্ত এই নিকাশি নালাটি নির্মাণ করা হয়েছে।। কিন্তু প্রস্তাবিত ওই নালার প্রথম আর শেষাংশ, এখনও তৈরিই হয়নি বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র মাঝখানের কিছুটা অংশ তৈরি করেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন ঠিকাদার। আর এরপরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
একদিকে সাফাই দিচ্ছেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। অন্যদিকে শাসকদলের হাতে থাকা স্থানীয় প্রশাসনের দিকে পাল্টা তীর ছুঁড়েছেন বিজেপি আর আমআদমি পার্টির মতো বিরতি শিবিরের নেতারা। আবার এই যাবতীয় টানাপোড়নের মধ্যে রীতিমত বিপাকে পড়ে, রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে, ঘটনাস্থল তৃপ্তি হোটেলের মালিক মনোজ দাস সকলেই।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের শাসকদলের বিরুদ্ধে কাটমানির নেওয়ার অভিযোগ ওঠায়, দৃশ্য তুই অস্বস্তিতে পড়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব।