“ডন কো পকড়না মুশকিল হি নেহি, নামুমকিন হ্যায়”। মনে পড়ছে ডায়লগটা? সেটা ছিল সিনেমার অন্য লিখে দেওয়া সংলাপ। আর এবার বাস্তবেই যেন, সেই রঘুডাকাতের ঢঙে পুলিশকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে, আরেক চোরবাবাজি। শুধু পুলিশ নয়, চুরির পরে বা অনেকসময় আগেও, স্বয়ং গৃহকর্তাকেও মেসেজ পাঠাচ্ছে সেই চোর। চুরি করে যে তাঁর বেশ মজাই হচ্ছে, মেসেজে সেটাও লিখে দিচ্ছে সেই বাটপার। আর এত কিছুর পরেও তাকে পাকড়াও করতে না পেরে, উল্টে এই চোরপুলিশের খেলায় হাঁফিয়ে উঠছেন উর্দিধারীরাই।
না ভিনদেশের কোনও রহস্য বঞ্চনায়। আমার আপনার এই খাসবাংলাতেই দিনের পর দিন ঘটে চলেছে, রুদ্ধশ্বাস এই চুরির ঘটনা। ঘটনাস্থল পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত আসানসোল এলাকা। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একটি সূত্রে জানা গেছে— গত শুক্রবার সেখানকার সূর্যনগরের এক বাড়ি থেকে নগদ টাকা এবং গয়না চুরি হয়। বাড়ির মালিক, তথা পেশায় ব্যবসায়ী রাজেশ গুপ্তের দাবি, সম্প্রতি এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাঁরা বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। ফলে বাড়ি ফাঁকাই ছিল। কিন্তু সেদিন দুপুরবেলায় রাজেশের বাবা বাড়িতে ফিরে দেখেন, বাড়ির পিছন দিকে দরজা ভাঙা। বাড়ির ভেতরে এদিক ওদিক ছড়ানো রয়েছে, কিছু সোনার গয়না। এর চেয়েও অবাক করা কাণ্ড ঘটল সেদিন রাতে। পুলিশকে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ব্যবসায়ী রাজেশ গুপ্ত জানিয়েছেন, চুরির ঘটনার দিন রাত ৯টা নাগাদ তিনি কয়েকটি হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজ পান। সেইসব মেসেজে লেখা ছিল, ‘চুরি করে বেশ মজা পেলাম, ‘৬ লাখ টাকাও পকেটে এসে গেল’। ওই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে এর পরের লাইনেই লেখা ছিল চ্যালেঞ্জ, ‘আমার নম্বর ট্র্যাক করতে পারবি না’। একই মেসেজে ওই ব্যবসায়ী সম্পর্কে দুঃসাহসে সেই চোর যে অনেক কিছুই জানে, সেটাও লেখা ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন রাজেশ গুপ্ত।
এরপরের টানা কয়েকদিন রাতের বেলায় লাগাতার ওই ব্যবসায়ীর হোয়াটসঅ্যাপে একই ধরনের মেসেজ আসে বলে তাঁর দাবি। মেসেজ বার্তা দেখে স্থানীয় হিরাপুর থানার তদন্তকারীরাও রীতিমতো অবাক। যদিও তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই ব্যবসায়ীর পরিচিত কেউই এই কাজ করেছে। কোনও বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে হোয়্যাটস অ্যাপে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। বিশদ তথ্যের জন্য আসানসোলের সাইবার বিভাগ এবং হোয়্যাটস অ্যাপ কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন, হীরাপুর থানার তদন্তকারীরা। তবে, এখনও পর্যন্ত সেই চোরের টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রতীক রায় শুধু জানিছেন, তদন্ত এগোচ্ছে, খুব শিগগিরই ধরা পড়বে ওই চোর।
