শীতের শুরু মানেই চড়ুইভাতি। আর শীত মানেই তো বাহারি সবজির সম্ভার। চতুর্দিকে শুধুই বাহারি খাবার। আর এই সময় অন্যতম হিট রেসিপি হলো গরমাগরম কষা আলুরদম। আহা!রসনায় তৃপ্তির এ এক অসাধারণ খাবার। ভাবলেই মনটা খাই খাই করে। কী তাই তো? তবে এখানে খবর দেব একটি আলুরদম উৎসব অনুষ্ঠানের।
হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। ‘আলুরদম উৎসব’। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রাজবলহাটের জাঁদার সুপ্রাচীন মেলার বিখ্যাত এই আলুরদম উৎসব। নতুন ধান ওঠাকে কেন্দ্র করে যেমন উৎসব হয়, মকর সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে তেমনই পৌষ পার্বণ হয়। দামোদরের চড়ে চাষের নতুন আলু ওঠাকে কেন্দ্র করে এই উৎসব হয়।
লোকমুখে কথিত, এই মেলা প্রায় ২০০-৩০০ বছরের পুরোনো। আলিবর্দি খানের সময়কাল থেকেই এই জাঁদার মেলায় আলুরদম উৎসব হয়ে আসছে। সেইসময় এই মেলা ‘পীর ঠাকুরের’ মেলা হিসেবেই পরিচিত ছিল। তখন গানের আসরও বসত মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে। পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয়তার অভাবে মেলাটি হারিয়ে যেতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে ৪১ বছর আগে এই মেলাকে পুনরায় উদযাপিত করার জন্য গঙ্গা পুজোর প্রচলন শুরু করা হয়। বর্তমানে এই মেলা জাঁদা পল্লি মঙ্গল সমিতির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, এর আগেমকর সংক্রান্তির দিন এলাকার সবাই গঙ্গায় স্নান করে পুজো দিয়ে শীতের রোদ মেখে দামদরের চড়েই আলুরদম আর মুড়ি খেতেন। সেইসময় কয়েকটি দোকান শুধু আলুরদম বিক্রি করতো, যা পরে মেলায় পরিণত হয়। তবে এই মেলার উৎপত্তির কারণ হল, আড়তদাররা আলুর গুনাগুণ কাঁচা অবস্থায় পরখ করতে পারতেন না। তাই আড়তদাররা আলুর গুনাগুণ যাতে পরখ করে কিনতে পারেন, সেইজন্য চাষির গৃহিণীরা আলুরদম রান্না করে তাঁদের আলুর গুনাগুণ পরখ করতে দিতেন। এইভাবে আড়তদাররাও খুশি হতেন এবং চাষিরা ন্যায্য মূল্য পেতেন। সেই থেকেই এই মেলার শুরু যা আজও ‘আলুরদম উৎসব’ বা ‘জাঁদার মেলা’ নামে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন মানের আলুরদম খেতে পারবেন। আলুরদম কেজি দরে ২০-৩০ টাকায় পাওয়া যায়। আর এই শীতে দামোদরের চরে ‘আলুরদম মেলা’ প্রাঙ্গনে আলুরদম সহযোগে একটা ছোটোখাটো চড়ুইভাতি মন্দ নয়।