ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২২ জুনঃ(Latest News) শতাব্দী প্রাচীন চন্ডীর ঝাড় চন্ডী মন্দিরের কল্পকাহিনী সকল লোক মুখে প্রচলিত। দেবী চন্ডীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা দেখে অবাক হতে হয় সকলকে। কে জানতো  এই দেবী চন্ডীর পদতলে একটা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস কালজানি ও চেকো নদীর পলি চাপা পড়েছিল। ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই অখ্যাত গ্রামে লুকিয়ে আছে পাঁচশত বছরের পূর্বের জয় পরাজয়ের ইতিহাস ।এই অজ্ঞাত ইতিহাস উদঘাটিত হয়েছে আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ শৈলেন দেবনাথের গবেষণার মাধ্যমে। রাজধানী দিল্লি থেকে তার প্রকাশিত গ্রন্থ, “KAMTAPUR : AN UNEXPLORED HISTORY OF EASTERN INDIA বইতে তার বিশদ তথ্য তুলে ধরেছেন।

গ্রাম বাসীদের কথায় এক সময় ১১টি গ্রাম মিলিত হয়ে পূজাতে অংশ গ্রহণ করতো।গ্রামের বয়স্করা অলৌকিক সব গল্প কাহিনিতে মন ভরালেন ।কিন্তু তার আড়ালে ইতিহাসের সত্যতা যাচাই করা গেল না।ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল এই চন্ডী ঝাড়ের দেবী চন্ডীই হলেন রাজা বিশ্ব সিংহের কোচ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার বিজয় চিহ্ন।

স্থানীয় বাসিন্দা নরেন রায় সরকার বলেন, “দেবী চন্ডী খুবই জাগ্রত। আমাদের বাবা ঠাকুরদারও এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।কোচবিহার রাজ আমলের দেবী চন্ডীকে আমরা পূজা দিয়ে আসছি।দেবীকে পুজো দিয়ে সব শুভ কাজ হয় গ্রামে।”দেবী চন্ডীর মন্দির থেকেই এই গ্রামের নাম হয়েছে বলে এলাকা বাসীর দাবি। খোলা মাঠের পূর্ব দিকে দেবীর মন্দির। পাশে বাঁশ গাছের ঝাড়।আট দশটা মন্দির থেকে একেবারেই আলাদা এই দেবী চন্ডীর মন্দিরটি। সাদামাটা টিনের চালের ঘর দেখে মন্দিরের তুলনায় আশ্রম বলেই মনে হয়। প্রতিদিন পুজো আর্চনা করা হয়। তবে আষাঢ় মাসে অম্বুবাচির আগে ও পরে বাৎসরিক পুজো হয়। বাড়ি বাড়ি দেবী চন্ডীকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এছাড়া সারা বছর মানত পুজো হয়ে থাকে।একসময় বাসন্তী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ও হরিনাম সংকীর্তন হতো।তবে এখন সেসবের জৌলুষ কমেছে। অধ্যাপক শৈলেন দেবনাথ বলেন, ” কামতাপুর সাম্রাজ্যের শুরু ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে আর সমাপ্তি ঘটে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে।কামতাপুর উত্তর পূর্ব ভারতের হিন্দুরাজ্য ছিল। কামতাপুরের প্রথম রাজধানী ছিলো চিলাপাতাগড়,তারপর ময়নাগুড়ি, পঞ্চগড়, ভেটাগড়ি এবং সবশেষে গোসানিমারি । ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুলতান হোসেন শা কামতাপুর দখল করে নেন ।তারপর তার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের এক একটি জায়গার সামরিক বিভাগ পরিচালনা ও রাজস্ব আদায়ের অধিকার দেন।তার মধ্যে অন্যতম সেনাবাহিনীর জেনারেল ছিলেন তুর্বক খান (তুর্কা খান)। তুর্কা খানের প্রাসাদ ছিলো চন্ডীঝাড় গ্রামের পূর্ব দিকে গদাধর নদীর তীরে কালজানি ও চেকো নদীর সংযোগ স্থলে।সেখানে উঁচু ঢিবির মতো জায়গা আজও রয়েছে। আর তুর্কা খানের প্রাসাদের ১ কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানের এই চন্ডী মন্দির ।

চিকনার জমিদার হারিয়া মন্ডলের পুত্র বিশ্ব সিংহ কামতাপুর সাম্রাজ্য উদ্ধারের দায়িত্ব নিয়ে ডুয়ার্সের গভীর জঙ্গলে চলে আসেন ।তোর্সানদীর তীরে মহাকালগুড়ি অঞ্চলে রাজধানী স্থাপন করেন ।বিশ্ব সিংহ কামতাপুর সাম্রাজ্য উদ্ধারের জন্য একদিকে কামতাপুরের জমিদারদের সংগঠিত করতে থাকেন অপরদিকে হোসেন শাহের সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন।বিশ্ব সিংহ চন্ডীর ঝাড় এলাকায় তুর্কা খানের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হন।যুদ্ধে তুর্কা খানের মৃত্যু হয়।।বিশ্ব সিংহ সেই তরবারি রেখে সেখানে চন্ডী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।বিশ্ব সিংহের হাতেই চন্ডী মন্দিরের সঙ্গে সঙ্গে কোচ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।আর চন্ডী মন্দিরটি কোচ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিহ্ন বহন করে চলেছে ।তবে শোনা যায় নদী ভাঙনের ফলে মন্দির স্থানান্তরিত করে বর্তমান জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে ।এছাড়া কয়েক দশক আগে এই মন্দির থেকে আরেকটি চন্ডী মূর্তি নিয়ে চেকো এলাকায় আরেকটি চন্ডী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করা হয়।

গ্রাম বাসীরা বলেন, গ্রামের মানুষ দেবী চন্ডীর আশীর্বাদ না নিয়ে কোনো নব দম্পতিকে ঘরে তুলেন না।বাড়িতে অন্য দেব দেবীর পুজো করার আগে দেবী চন্ডীর পূজো দেন এলাকাবাসী। আষাঢ় মাসে অম্বুবাচির আগে দেবী চন্ডীকে বাড়ি বাড়ি ঘোরাতে হয়।এমনকি কোনো একসময় পুজারি পুজো দিতে এসে মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়মিত বাঘ দেখতে পেতেন।এছাড়া এলাকায় কলেরা ও বসন্ত রোগের প্রকোপ থেকে দেবী চন্ডী রক্ষা করে আসছে বলে মনে করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বাদল দেবনাথ বলেন, “কোচবিহারের মহারাজার সময় থেকে দেবী চন্ডীর এই পুজা হয়ে আসছে।আগে ১১ টি গ্রাম একত্রিত হয়ে এই পুজো করতেন।এখন মাত্র দুটি গ্রাম মিলে এই পুজো হচ্ছে । নিত্য নতুন মন্দির গড়ে ওঠায় চন্ডী মন্দিরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে ।নতুন করে মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রায়োজন।”(EVM News)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর