মাধব দেবনাথ, নদীয়া, ২৩ ফেব্রুয়ারিঃ দুয়ারে যমরাজের দূত এলে মৃত্যু হতে কতক্ষণ লাগে? কয়েকমুহূর্তের বেশি নিশ্চয়ই! কিন্তু ওই যে বলে না, রাখে হরি মারে কে? তা সেই প্রবাদটাই নিজের জীবন দিয়ে টের পেলেন, নদীয়ার শান্তিপুর চুনারীপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় তাঁতশ্রমিক প্রদীপ ঘোষ। গলায় মাফলারের ফাঁস দিয়ে, সিলিং ফ্যানে সেই ফাঁসের আরেকটা দিক আটকে, ঝুলে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রায় এক মিনিট ঝুলে থাকার পরেও, দিব্যি বেঁচে ফিরলেন তাঁতশ্রমিক প্রদীপ ঘোষ। বাঁচিয়ে ফেরালেন প্রদীপের দাদা আর প্রতিবেশীরা। কার্যত তাঁরাই হয়ে গেলেন আত্মহত্যার উদ্যত প্রদীপের জীবনে, ভগবান হরি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচলেও, আপাতত গুরুতর আহত অবস্থায় শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই ব্যক্তি।
এই গোটা ঘটনায়, প্রদীপের পরিবারেরঅভিযোগের আঙুল উঠেছে, তার শ্বশুরবাড়ির দিকে। অভিযোগ, গত লকডাউনের সময় থেকেই স্ত্রীকে নিয়ে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতে প্রদীপের ওপর চাপ দিচ্ছিল, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু মা-বাবা সহ পরিবারের লোকজনকে ছেড়ে ভিনরাজ্যে রোজগার করতে যেতে রাজি হয়নি প্রদীপ। এনিয়ে দিনের পর দিন তাকে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে হুমকি দেওয়া হত বলে, প্রদীপের পরিবারের দাবি। এমনকী, তাঁদের পাঁচবছরের মেয়েকে নিয়ে প্রদীপের স্ত্রী বাপেরবাড়িতেই থাকতেন। নিজে তো বটেই, সেইসঙ্গে মেয়েকেও তার বাবার কাছে আসতে দিতেন না প্রদীপের স্ত্রী। পরিবারের আরও দাবি, দিনদুয়েক আগে ফের তাঁকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে, ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতে চাপ দেন, প্রদীপের শ্বশুর। কিন্তু সেই প্রস্তাব না মানায় প্রদীপকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল বলে, গুরুতর অভিযোগ করেছে প্রদীপের পরিবার। এরপরেই বাড়ি ফিরে, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় মাফলার বেঁধে ঝুলে পড়ে, আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তাঁতশ্রমিক।
বিষয়টি নিয়ে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে জানিয়েছে, তাঁতশ্রমিক প্রদীপ ঘোষের পরিবার। তবে এত পারিবারিক তরজার মধ্যেও, এভাবে প্রাণে বেঁচে যাওয়াটাই শিরোনামে এনে দিয়েছে, এই দরিদ্র তাঁতশ্রমিককে। প্রতিবেশীরা বলছেন, জন্ম, মৃত্যু সবই যে ঈশ্বরের হাতে, সেই তিনিই হয়তো সুদিন আর সুখ ফিরিয়ে দেবেন বলে প্রদীপের জীবন ফিরিয়ে দিলেন।