অমিত কৃষ্ণ পাল, ১২ অগাস্টঃ(Latest News) শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে কথা! ‘মা আমি ভালো নেই! আমাকে নিয়ে চলো’। এরপরই সবশেষ। নদীয়া জেলার ছোট্ট একটা গ্রাম বগুলার ওই পরিবারটিতে নেমে এলো আঁধার। স্বপ্ন হারা হল এক পিতা-মাতা। খবর এসে পৌঁছয়, তাঁদের ছেলে বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছে। আর তখনই মাথার ওপর বজ্রাঘাত। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে বছর আঠারোর স্বপ্নদ্বীপের। কিন্তু কেন চলে যেতে হল স্বপ্নদীপকে?

শুক্রবারে পাওয়া খবর অনুযায়ী যেটা জানা গিয়েছে, গত ৩রা অগস্ট বৃহস্পতিবার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় আসেন স্বপ্নদীপ। ভর্তি হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক স্তরে।

রাত্রিবাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েরই বয়েস হোস্টেল গেলে সেখানে জায়গা না মেলায় হোস্টেলেরই সিনিয়রদের সঙ্গে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বপ্নদীপ। সম্মতি জানায় তার বাবাও। কে বা জানতো সেই সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাড়াবে তাঁদের জীবনে!

সূত্র মারফত যেটা জানা গিয়েছে, বয়েজ হোস্টেলে রাত্রিবাসের সময় তাকে প্রথমে বিবস্ত্র করা হয়েছে। তাকে নাকি নাচ করতেও বলা হয়েছে। আর তারপরই তার সঙ্গে ঘৃণ্যতম ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। যা স্বপ্নদীপ অদূর ভবিষ্যতেও কল্পনা করতে পারেনি। যে ঘটনা আত্মসম্মানবোধে আঘাত করেছিল আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা এই পড়ুয়াকে।

অনুমান করা হচ্ছে, এই ঘৃণ্যতম ঘটনার চাপেই হয়তো আত্মহত্যা করেছেন স্বপ্নদীপ।আর নয়তো তাকে বারান্দা থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, পরনে ছিল শুধুমাত্র একটি গামছা।

খুনের দাবি আরো জোরালো হয়েছিল, বুধবার সকালে যখন স্বপ্নদীপ তার মাকে ফোন করে বলেছিল,তার পড়ার ঘরটি খুব সুন্দর। পড়ার টেবিল এবং থাকার জায়গাটাও খুব সুন্দর। সে বাবা মাকে ভিডিও করে তা দেখাবে । কিন্তু এই স্বপ্নদীপই বুধবারই রাত ন’টা নাগাদ মাকে ফোন করে জানায়, সে ভালো নেই। তাকে এক্ষুনি এখান থেকে নিয়ে যাক তারা।

এদিকে নদীয়া থেকে যাদবপুর মুহূর্তের মধ্যে আসা কার্যত অসম্ভব ছিল তার বাবা মায়ের পক্ষে। তাই একপ্রকার অস্থির হয়েই স্বপ্নদীপের বাবা-মা তার কথা শুনে বারবার ফোন করতে থাকে। ফোন বেজে গেলেও তা রিসিভ না করায় দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায় তার বাবা মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎই দুঃসংবাদ আসে, হোস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছে স্বপ্নদীপ।

ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ঘটনাস্থল থেকেই প্রশাসনকে তাঁর কড়া বার্তা, ‘ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে স্ট্রং একশন নিতে হবে’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন অধ্যাপককে রাজভবনে ডেকে এই মর্মে এক প্রস্ত বৈঠকও সারেন রাজ্যপাল ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তাঁর টুইটে লেখেন, ‘প্রশাসনের উচ্চ মহলের মদত না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে এসএফআই এবং টিএমসিপির নেতৃত্বে এই র‍্যাগিং চালানো সম্ভব নয়” ।

শুক্রবার সকালে যাদবপুর থানায় স্বপ্নদীপের বাবা খুনের অভিযোগ করে এফ আই আর দায়ের করলে যাদবপুর থানার পুলিশ বয়েজ হোস্টেলের ১০ জন আবাসিককে ডেকে পাঠালেও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কেউ হাজিরা দেয়নি বলে পুলিশ সূত্রেই খবর।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ,তদন্তে দোষীদের বার করে শাস্তি দিলেও যে বাবা-মা তার সন্তানকে হারালো, সে কি আর কোনদিন ফিরে পাবে তার সন্তানকে? নিজেদের মানসিক তৃপ্তির চাহিদা মেটাতে মানুষরূপী যে দানবরা দিনের পর দিন Ragging নামে যে হত্যা লীলা চালাচ্ছে, কেন তাদেরকে খুঁজে বার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয় না? কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির “অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি” নবীন পড়ুয়াদের সঙ্গে যাতে এই ধরনের আচরণ না করা হয়, তার জন্য আগেভাগে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না? তাদের কাজ কি দুর্ঘটনার পরে তদন্ত করা? সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্নদেখা বাবা-মায়েদের কেন এভাবে বারবার সন্তান হারা হতে হবে? আর কত স্বপ্নদীপকে এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে? (EVM News)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর