অরূপ ঘোষ, ঝাড়গ্ৰাম, ২৪ ফেব্রুয়ারিঃ পঞ্চায়েত হোক, বা পুরসভা। লোকসভা হোক বা বিধানসভা। ভোট এলেই রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের উন্নয়নের কানফাটানো প্রচার করতে দেখা যায়, সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, সেই আপাতত তুঙ্গে তুলেছে এই রাজ্যের শাসকদল। কিন্তু বাস্তবে সেই উন্নয়নের প্রচার মাটিতে থাকা মানুষের কাছে কতটা পৌঁছেছে, তার হাতেগরম প্রমাণ পাওয়া গেল জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ি এলাকার বামুনডিহা গ্রামে। নিতান্ত দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোর ঘরে, এমনিতেই বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর পরিস্থিতি নেই। আবার বছরের পর বছর সেই অন্ধকারে থেকেও, আঁধারে অট্টহাসির মতোই এই পরিবারগুলির বাড়িতে পৌঁছেছে পাহাড়প্রমাণ বিদ্যুতের বিল। সেই বিলের অঙ্ক কোথাও ৫০ হাজার টাকা, তো কোথাও আবার ৮০ হাজার টাকা। দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা বামুনডিহার এমনই এক ডোমপাড়ায়, এই অবিশ্বাস্য বিদ্যুতের বিল নিয়ে কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে, গোটা জঙ্গলমহলে। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের এমন হাস্যকর কাজকারবারে, রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছে, ডোমপাড়ার বাসিন্দারা। বিলের টাকা দিতে না পারায়, ইতিমধ্যেই অবশ্য ফের অন্ধকারে চলে গিয়েছে, প্রায় নিরন্ন এই মানুষগুলোর গেরস্থালি। রাতের আঁধারে রীতিমতো পুরনো সেই আতঙ্কের দিনে ফিরে গিয়েছে, এই প্রান্তিক পরিবারগুলি।
মূলত বাঁশ থেকে ঝুড়ি সহ নানা সামগ্রী তৈরি আর বিক্রি করেই, বেলপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ডোমপাড়ার মানুষের পেটের ভাত জোগাড় হয়। বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময় আর উৎসবে ঢাক বাজিয়ে কিছু বাড়তি রোজগারও হয়। এহেন পরিবারে বিলাসী জীবনের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম থাকবে, এমনটা সম্ভবত দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না। তাহলে কেন এই ভুতুড়ে বিল? রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের স্থানীয় দফতরের কর্মী আর আধিকারিকরা অবশ্য সঙ্গত এই প্রশ্নের সামনে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অন্যদিকে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগারওয়ালের দাবি, তিনি নিজে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলে, ওই দরিদ্র পরিবারগুলির বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করিয়েছিলেন। কিন্তু কী কারণে এত বিল এল, আর সেই বিল ভেতরে নাকি সত্যি,  সে ব্যাপারে স্থানীয় বিদ্যুৎ দপ্তরকে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অমানবিক আর স্পর্শকাতর এই বিদ্যুতের বিল নিয়ে যথারীতি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতোর অভিযোগ,  এরকম বিল বহু জায়গায় দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে কে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু তা না করে বিদ্যুৎ দফতর সব জানিয়ে দিচ্ছে, বিদ্যুতের আলোয় ফিরতে গেলে ওই দরিদ্র পরিবারগুলোকে এই ভুতুড়ে বিলের টাকা আগে দিতেই হবে। কিন্তু তারা কীভাবে এই বিল দেবে? না দিতে পারার জন্য যদি এই মাধ্যমিকের সময়ে, কোনও পরীক্ষার্থীর অসুবিধা হয়, তবে তার দায় কে নেবে?
একদিকে অন্ধকার আর গরমে থাকার কষ্ট। অন্যদিকে অবিশ্বাস্য বিদ্যুতের বিল জমা দিতে না পারলে, আইনি সমস্যায় জড়িয়ে পড়ার ভয়। সবমিলিয়ে জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েতের বামুনডিহা গ্রামের ৩৫টি ডৈম পরিবার, এখন আক্ষরিক অর্থেই দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর