ব্যুরো নিউজ, ৮ জানুয়ারি: প্রজাতন্ত্র দিবস কি?
ভারতে সংবিধানের সূচনাকালে প্রজাতন্ত্র শব্দটিকে সংশ্লিষ্ট করা হয়নি। পরে ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনে প্রজাতন্ত্র শব্দটি যুক্ত হয়। প্রজাতন্ত্র শব্দের অর্থ হলো ভারতের সর্বোচ্চ শাসন ক্ষমতায় বা চেয়ারে যে কোন ভারতীয় নাগরিক সংবিধান নির্দিষ্ট যোগ্যতা অনুযায়ী বসতে পারে। অর্থাৎ ভারতের রাষ্ট্রপতির পদটিতে যেকোনো ভারতীয় নাগরিক জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ, স্ত্রী, পুরুষ ভেদ না করে বসতে পারে। এই পদটি কখনোই বংশানুক্রমিক হবে না।
রাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থা নস্যাৎ করে প্রজাতন্ত্র গৃহীত হয়। রাজতন্ত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ ছিল বংশানুক্রমিক। বিশ্বের বহু দেশেই রাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থা একসময় সক্রিয়ভাবে প্রচলিত ছিল। ভারতে ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার সন্ধান পাওয়া যায়। প্রজাতান্ত্রিক ব্যাবস্থা চালু হওয়ায় ভারতের রাষ্ট্রপতি বারেবারে সংবিধান নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে একক হস্তান্তর যোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতি পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। আর সেই কারনে ভারতের সর্বোচ্চ শাসকের পদে কখনো বিহারের অধিবাসী ভুক্ত ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ, কখনো দক্ষিনের সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, কখনো পশ্চিমবঙ্গের একজন বাঙালি প্রণব মুখোপাধ্যায়, আবার কখনো প্রতিভা দেবীসিংহ পাটিলের মতো মহিলা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
সুপ্রিম জয় বিলকিস বানোর | গুজরাট সরকারের আসামীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত ভুল
সাংবিধানিক দিক থেকে রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ পদাধিকারি। আইন, শাসন, বিচার এই ৩ বিভাগে তিনি সাংবিধানিক প্রধান। তিনি উপরাষ্ট্রপতি, লোকসভা স্পিকার, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল, নৌ সেনা, স্থল সেনা, ও বায়ু সেনার প্রধান, ও সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। তিনি যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। অথবা তাঁর নির্দেশেই তা স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিকভাবে সকল ক্ষমতার অধিকারি হলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদই সকল কাজ করে থাকেন। ঠিক এই কারনেই রাষ্ট্রপতিকে ভারতের প্রকৃত শাসক অথবা নামমাত্র শাসক বলা হবে সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। সেই বিতর্ক আজও চলছে। একদল সংবিধানবিদ মনে করেন, ভারতের প্রকৃত শাসন ন্যাস্ত রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত মন্ত্রীসভার উপর। আবার অনেকে তা মানতে চাননি। তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রপতির হাতেই ভারতের সংবিধানের ৩৫২, ৩৫৬, ও ৩৬০ ধারা অনুসারে জরুরী অবস্থা জারি করার ক্ষমতা রয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর হাতে নেই।
তবে রাষ্ট্রপতি যদি কোন রাজ্যের রাজ্যপাল বা প্রধানমন্ত্রীর এই মর্মে সুপারিশ পান তবে তিনি জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন। এছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে ‘ভেটো’ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সাধারণ বিলে তিনি সই না করে ফেলে রাখতে পারেন। তবে অর্থবিল প্রথমবার ফেরত দিলেও দ্বিতিয়বার সেই বিল তাঁর কাছে আসলে তিনি তাতে সাক্ষর করতে বাধ্য থাকেন। তাই ভারতের রাষ্ট্রপতির আসনটি প্রজাতান্ত্রিক ব্যাবস্থার উদাহরণ বলেই সংবিধানবিদ্গন মনে করেন। ইভিএম নিউজ