ইভিএম নিউজ, ২২ ফেব্রুয়ারিঃ ঐতিহ্যবাহী ট্রাম পরিষেবার গতি সচল রাখার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করলেন রাজ্য বিধানসভারই অধ্যক্ষ তথা দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুর পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারকে তাঁর আবেদন, কলকাতার স্মৃতি ভরপুর ঐতিহ্যবাহী ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখা হোক। কিন্তু বিধানসভায় তাঁর এই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনও আশ্বাসই দিতে পারেননি পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বর্তমানে কলকাতা নগরী থেকে ট্রাম পরিষেবা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। অতীতে কলকাতায় প্রায় ৪১ টি রুটে ট্রাম পরিষেবা সচল ছিল। বর্তমানে সেখানে শুধু মাত্র ৪টি রুটে ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
প্রসঙ্গত, ১৮৭৩ সালে প্রথম আর্মেনিয়া ঘাট থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ট্রাম চালু হয়। শুরুর সময়ে এই ট্রাম যাত্রার দৈর্ঘ্য পথ ছিল প্রায় ৩.৯ কিলোমিটার। ট্রাম হল পরিবেশবান্ধব এক যাত্রীবাহী পরিষেবা। কলকাতায় প্রথমদিকে ঘোড়ায় টানা ট্রাম ব্যবহার করা হত। সেইসময় ১৭৭ টি ট্রাম ও ১০০০ টি ঘোড়ার সাহায্যে এই পরিষেবা চালু ছিল। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে ট্রাম পরিষেবাতেও উন্নতি ঘটে। বিশ্বের উন্নত দেশ গুলিতে এখনও পরিবেশবান্ধব উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার অংশ হল এই ট্রাম। যেমন সিলেসিয়ান ইন্টারআরবানস ও মেলবোর্নের ট্রাম পরিষেবা বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক। এছাড়াও কানাডার টরোন্টো, চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, পর্তুগালের রাজধানী, সোভিয়েত রাশিয়ার সেন্ট পিটারসবার্গ , আমস্টারডাম,বাসেল ও জুরিখ ইত্যাদি শহরে আজও ট্রাম নেটওয়ার্ক সচল রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কলকাতায় এই ট্রাম পরিষেবা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিবাদ। ট্রামের মতো পরিবেশবান্ধব এই প্রাচীন পরিবহণ ব্যবস্থাকে উন্নত না করে তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।
মঙ্গলবার অধিবেশনের শেষ লগ্নে বিমান বাবু বলেন, ‘ট্রাম কলকাতার ঐতিহ্য। সেই ট্রাম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কলকাতার ট্রাম নিয়ে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। দেখবেন যাতে বন্ধ না হয়ে যায়। আমি কলকাতার মেয়র তথা পরিবহণমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বিষয়টি যাতে দেখেন।’ অন্যদিকে তাঁর এই আবেদনে ওই সভাতেই নগরোন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমাদের সরকারের কোনও অভিপ্রায় নেই ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু মেট্রো রেলের কাজ ও অন্য কিছু কারণে কয়েকটি রুটে ট্রাম চলাচল বন্ধ করা হয়েছে,আবার কিছু জায়গায় লাইন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবুও আমি দেখছি কী করা যায়’।
বিশ্বের দূষিত শহরগুলির তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে কলকাতাও। বায়ুদূষণের কালো মেঘে কার্যত ঢেকে গিয়েছে গোটা তিলোত্তমা। সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগের। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার পরিবেশবান্ধব ট্রামের স্লথ গতির কারণ দেখিয়ে পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন নাকি প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে ভবিষ্যতের বায়ুদূষণের কথা মাথায় রেখে দিকে দিকে আরও উন্নতিশীল পরিষেবা চালুর দিকে নজর দেয় সেদিকেই নজর থাকবে রাজ্যবাসীদের।