ব্যুরো নিউজ, ১২ সেপ্টেম্বর :ভারতের মধ্যপ্রদেশের নন্দলেতা গ্রামে বসবাসরত ১৭ বছর বয়সি ললিত পাটীদার যেন সত্যিকারের নেকড়ে-মানবের কাহিনীর মতো। তার শরীরের অধিকাংশ অংশই ঘন লোমে ঢাকা, যা দেখে মনে হয় যেন তিনি একজন বাস্তবিক নেকড়ে! এ ধরনের চেহারা হলে সত্যিই অনেকের হৃদকম্প হতে পারে। যদিও নেকড়ে-মানব বা ওয়্যারউল্ফের কাহিনীগুলি সাধারণত লোককাহিনীর অংশ, বাস্তবে এর অস্তিত্ব নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।
নতুন i phone 16: পূজার আনন্দে টেকনোলজির নতুন ছোঁয়া!
কোন রোগে আক্রান্ত ললিত?
তবে সম্প্রতি ললিতের বিষয়টি বেশ আলোচনায় এসেছে। তার শরীরের লোম এতটাই ঘন যে, তাকে দেখতে নেকড়ে বা বানরের মতো লাগে। যদিও তার কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নেই, কিন্তু তার এই অস্বাভাবিক চেহারা তাকে ঠাট্টার এবং উপহাসের মুখোমুখি করে। সহপাঠীরা তাকে “বানর” বা “নেকড়ে” বলে ডাকে এবং তাকে দেখে বাচ্চারা ভয় পায়।
ভারতের মাটিতে সি-১৩০ সুপার হারকিউলিসের কারখানা: লকহিড মার্টিন ও টাটার যুগান্তকারী উদ্যোগ
ললিত জানাচ্ছে, তার সহপাঠীরা মনে করেছিল সে তাদের কামড়ে দিতে পারে এবং কিছু শিশু তাকে দেখে পাথর ছোড়ে। এ ছাড়াও, কিছু লোক তার সম্পর্কে ভৌতিক গল্প ছড়িয়ে দিয়েছে, যা তার মানসিক কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ললিত এবং তার পরিবার অবশেষে বুঝতে পেরেছেন যে, এটি কোনো অতিপ্রাকৃত বিষয় নয়, বরং একটি বিরল রোগ।ললিত যে রোগে আক্রান্ত তা হলো ‘হাইপারট্রাইকোসিস’। এ রোগটি এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করে যেখানে শরীর এবং মুখে অস্বাভাবিক পরিমাণে লোম গজিয়ে ওঠে। ললিতের ক্ষেত্রে, এই রোগের লক্ষণ প্রথম দেখা যায় তার ছয় বছর বয়সে এবং ধীরে ধীরে তার শরীর জুড়ে লোম বাড়তে থাকে। পৃথিবীতে মাত্র ৫০ জন এই বিরল রোগে আক্রান্ত, যা সাধারণত জন্মের পর অথবা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে প্রকাশ পেতে পারে।
‘হাইপারট্রাইকোসিস’ বা ‘ওয়্যারউলফ সিনড্রোম’ একটি জিনগত ত্রুটির কারণে ঘটে। স্পেনের পেট্রাস গনজালেস, যিনি ১৬শ শতাব্দীতে ‘ক্যানারিয়ান ওয়্যারউল্ফ’ নামে পরিচিত ছিলেন, সম্ভবত তিনিই প্রথম এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি । তার কন্যা অ্যান্টোনিয়া এবং ফিলিপিন্সের এক শিশু একই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায়, চুলের পরিমাণ কমিয়ে রাখতে ইলেক্ট্রোলাইসিস বা লেজার চিকিৎসা করা হয়। লোমের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ছাঁটাই করতে হয়, তবে কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও পাওয়া যায়নি। ললিত তার শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবনের স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করছে এবং আশা করা যায় যে, তার গল্প বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, যা তার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে।