ব্যুরো নিউজ ০৮ জুলাই ২০২৫ : মঙ্গলবার ভোর থেকে একটানা বৃষ্টিতে নাজেহাল শহরবাসী। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় প্রবল বর্ষণ চলছে, যার ফলস্বরূপ শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন। অফিস ও স্কুলযাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা
মঙ্গলবার ভোর থেকেই কলকাতার আকাশ কালো ঘন মেঘে ঢাকা। সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের গভীর নিম্নচাপই এই দুর্যোগের কারণ। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সারাদিনই বৃষ্টি চলবে। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গে গড়ে ১৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের থেকে বেশি।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমি বিপর্যয়ের সম্ভাবনা! নিম্নচাপ ঘনীভূত, সতর্কতায় আবহাওয়া দপ্তর
কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (সকাল ৮টা পর্যন্ত)
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিম্নরূপ:
- আলিপুর: ৪৫ মিলিমিটার
- কাঁকুড়গাছি: ৮০ মিলিমিটার
- সল্টলেক/নিউ টাউন: ৮৮ মিলিমিটার
- ব্যারাকপুর: ৯৩ মিলিমিটার
- শ্যামবাজার (উত্তর কলকাতা): ৭৭ মিলিমিটার
শহরের জলমগ্ন এলাকা:
কসবা থেকে কাঁকুরগাছি, টালা থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত গোটা শহর জল থইথই করছে। কোথাও হাঁটুজল, আবার কোথাও গাড়ি-বাইক ডুবে যাচ্ছে জমা জলে।
- মানিকতলা, উল্টোডাঙ্গা ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট এবং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ রামমন্দির এলাকা প্রবল বর্ষণে ডুবে গিয়েছে।
- দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী, বেহালা, শিলপাড়া, সখেরবাজার, গল্ফগ্রিন, কসবা, বালিগঞ্জ এবং উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, উল্টোডাঙা সর্বত্রই জল জমেছে।
- ফিয়ার্স লেন, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, নর্থ পোর্ট থানা লাগোয়া এলাকা, কাঁকুড়গাছি, পাতিপুকুর এবং উল্টোডাঙা আন্ডারপাসেও জল জমেছে।
- বেহালা, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল জমেছে।
রেল পরিষেবা ব্যাহত:
প্রবল বৃষ্টিতে ট্রেন লাইনে জল জমে যাওয়ায় রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
- বেলঘরিয়া ডাউন ২ নম্বর লাইনে জল জমে থাকায় ট্রেন ধীর গতিতে চলছে।
- টিটাগড় ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় অন্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ধীর গতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।
- বারাসতের ১ নম্বর লাইন জলমগ্ন, ওই শাখাতেও অত্যন্ত ধীর গতিতে ট্রেন চলছে।
- ব্যারাকপুর স্টেশনে লাইনের উপর জল জমে থাকায় খুব ধীর গতিতে ট্রেন চলছে। পাম্প চালিয়ে জল বের করার চেষ্টা চলছে।
- হাবড়া শাখায় গুমা স্টেশনে দুটি লাইন জলমগ্ন হওয়ায় ট্রেন পরিষেবা আংশিক বিঘ্নিত হয়েছে।
- শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার রেললাইনের একটা বড় অংশ জলমগ্ন হওয়ায় ট্রেন চলাচল সকাল থেকেই ব্যাহত। বারাকপুর, টিটাগড়, ডায়মন্ড হারবার এবং ক্যানিং লাইনে ট্রেন চলছে অতি ধীর গতিতে।
কলকাতা পুরসভার বক্তব্য :
ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, নাগাড়ে বৃষ্টি না হলে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই শহরের জল নেমে যাবে। সেই মতো কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা সর্বক্ষণ জল জমা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু একটানা বৃষ্টির কারণে জল নামানোর কাজ বারবার বাধার মুখে পড়ছে , যা পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব বোঝাচ্ছে ।
প্রবল বৃষ্টিতে বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি চলাচলে সমস্যা হওয়ায় নিত্যযাত্রীরা কাজে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেকটা দেরি করছেন এবং তারা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। শিয়ালদহ মেইন শাখাতেও কিছু জায়গায় লাইনে জল জমতে শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে, যার ফলে বেশ কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে চলাচল করছে।