ব্যুরো নিউজ ২২ জুলাই ২০২৫ : সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখর স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে ৭৪ বছর বয়সী ধনখর অবিলম্বে কার্যকর হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, “স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে, সংবিধানের ৬৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে, আমি অবিলম্বে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।” উল্লেখ্য, ২০২২ সালের আগস্টে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং তার মেয়াদ ২০২৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত ছিল। তার এই পদত্যাগ এমন এক সময়ে এলো, যখন সংসদের বর্ষা অধিবেশনের প্রথম দিন শেষ হয়েছে। পদাধিকারবলে তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
ধনখরের এই হঠাৎ পদত্যাগের ফলে নতুন উপরাষ্ট্রপতির নিয়োগ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে – সেই পদ্ধতির বিবরণ দেওয়া হল ।
উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা:
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি পূরণ করতে হবে:
- ভারতের নাগরিক হতে হবে।
- ৩৫ বছর বয়স পূর্ণ করতে হবে।
- ভারত সরকার বা কোনো রাজ্য সরকার বা কোনো অধীনস্থ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা চলবে না।
Jagdeep Dhankhar : ভারতীয় উপরাষ্ট্রপতির পদত্যাগ: এক কর্মতত্পর অধ্যায়ের অবসান
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া:
ভারতের নির্বাচন কমিশন উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন পরিচালনা করে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, উপরাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য দ্বারা গঠিত একটি নির্বাচনী কলেজ দ্বারা একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনী কলেজে লোকসভা এবং রাজ্যসভার সমস্ত সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকেন, এমনকি মনোনীত সদস্যরাও ভোট দিতে পারেন।
ভোটদান গোপন ব্যালটের মাধ্যমে করা হয় এবং ভোটারদের পছন্দের ক্রমানুসারে প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে হয়। প্রতিটি ভোটারকে তাদের প্রথম পছন্দের নামের পাশে ‘১’ লিখতে হয়, এবং তারপর ‘২’, ‘৩’, ‘৪’ ইত্যাদি অন্যান্য পছন্দের পাশে লিখতে পারেন। সংখ্যাগুলি অবশ্যই অঙ্ক ব্যবহার করে লিখতে হবে, যেমন ভারতীয় সংখ্যা, রোমান সংখ্যা বা যেকোনো ভারতীয় ভাষায়।
নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পেতে হয়, যাকে ‘কোটা’ বলা হয়। এই কোটা নিম্নোক্ত সূত্র অনুযায়ী হিসাব করা হয়: কোটা = (মোট বৈধ ভোট ÷ ২) + ১ (কোনো অবশিষ্ট থাকলে তা উপেক্ষা করা হয়)।
যদি প্রথম গণনায় কোনো প্রার্থী কোটা পূরণ করতে না পারেন, তবে সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয় এবং তার ব্যালটগুলি দ্বিতীয় পছন্দের ভিত্তিতে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় কোটা অর্জন করেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর, রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন এবং তা কেন্দ্রীয় সরকার (আইন ও বিচার মন্ত্রক) এবং ভারতের নির্বাচন কমিশনকে জানান। সরকার পরে নির্বাচিত ব্যক্তির নাম গেজেটে প্রকাশ করে।
নতুন উপরাষ্ট্রপতি কবে নির্বাচিত হবেন?
মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সৃষ্ট শূন্যপদ পূরণের নির্বাচন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সম্পন্ন করা হয়। তবে, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের কারণে যদি কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তবে সেই শূন্যপদ পূরণের জন্য যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নবনির্বাচিত ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে সম্পূর্ণ পাঁচ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত হন, পূর্বসূরির অবশিষ্ট মেয়াদ নয়।
ইতিহাসে মেয়াদকালের পূর্বে পদত্যাগকারী উপরাষ্ট্রপতিগণ:
জগদীপ ধনখর ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় উপরাষ্ট্রপতি যিনি তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন। এর আগে, ভি.ভি. গিরি ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পদত্যাগ করেন। দ্বিতীয় জন ছিলেন আর. ভেঙ্কটারামান, যিনি ১৯৮৪ সালের আগস্টে নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৭ সালের জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন।
জগদীপ ধনখরের নির্বাচন এবং বর্তমান সংখ্যার হিসেব:
২০২২ সালের ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থী হিসেবে জগদীপ ধনখর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি কংগ্রেস সমর্থিত মার্গারেট আলভাকে ৫২৮ ভোটে পরাজিত করে জয়লাভ করেন, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ নির্বাচনী ভোট ছিল। আলভা মাত্র ১৮২ ভোট পেয়েছিলেন।
বর্তমানে, লোকসভায় এনডিএ-র ২৯৩ জন সদস্য এবং রাজ্যসভায় ১৩৩ জন সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে আইনপ্রণেতার সংখ্যা ৪২৬ জন, যা এনডিএ সমর্থিত একজন প্রার্থীকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য যথেষ্ট। এমনকি ধনখরের ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গিয়েছিল, ক্রস-ভোটিংও এই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
উপরাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও, সরকারিভাবে এখনো সম্ভাব্য প্রার্থী বা নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে কোনো তথ্য জনসমক্ষে আসেনি। এই হঠাৎ পদত্যাগ দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।