ব্যুরো নিউজ ০২ জুলাই : পবিত্র শ্রাবণ মাস সমাগত, আর এর সাথে শুরু হতে চলেছে হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রা, কাঁওয়ার যাত্রা। এই সময়টায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত গঙ্গার পবিত্র জল সংগ্রহ করে শিব মন্দিরে অর্পণ করেন। এই পুণ্যযাত্রার সময় তীর্থযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে যাত্রাপথের ধারের খাবারের দোকানগুলি নিয়ে কিছু বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে খাদ্য বিক্রেতাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং খাবারের বিশুদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে উত্তরাখণ্ড সরকার তীর্থযাত্রীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছে।
লাইসেন্স প্রদর্শন বাধ্যতামূলক
উত্তরাখণ্ড সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে, রাজ্যের কাঁওয়ার যাত্রা পথের সমস্ত ভোজনালয়কে তাদের খাদ্য লাইসেন্স বা নিবন্ধন শংসাপত্র স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে। স্বাস্থ্য সচিব এবং খাদ্য সুরক্ষা ও ঔষধ প্রশাসন কমিশনার আর রাজেশ কুমার জানিয়েছেন যে, ছোট ব্যবসায়ী এবং ফুড কার্ট মালিকদেরও তাদের নিবন্ধন শংসাপত্র সঙ্গে রাখতে এবং প্রদর্শন করতে হবে।
কুমার বলেন, “তীর্থযাত্রার রুটের হোটেল, ধাবা, ফুড কার্ট এবং স্টলগুলির মালিকদের তাদের লাইসেন্স বা নিবন্ধন শংসাপত্রের একটি পরিষ্কার কপি স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে যাতে গ্রাহকরা সহজেই তা দেখতে পারেন।”
বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার অবমাননায় উত্তাল সিকিম !
‘ফুড সেফটি ডিসপ্লে বোর্ড’ স্থাপন বাধ্যতামূলক
রাজেশ কুমার আরও বলেন যে, হোটেল, ভোজনালয়, ধাবা এবং রেস্তোরাঁগুলিকে একটি ‘ফুড সেফটি ডিসপ্লে বোর্ড’ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন করতে হবে, যা গ্রাহকদের খাদ্য মানের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে সহায়তা করবে।
নিয়ম লঙ্ঘনে কঠোর শাস্তি
কুমার সতর্ক করে বলেন, “যেসব ব্যবসায়ী এই নির্দেশাবলী মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে খাদ্য সুরক্ষা আইন ২০০৬ এর ধারা ৫৫ এর অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যার আওতায় আদেশ লঙ্ঘনকারীদের উপর ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে।” তিনি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে এই আদেশ কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দেন। “প্যান্ডেল এবং কমিউনিটি কিচেনগুলিতে ভক্তদের পরিবেশন করা খাবারের মানের সাথে কোনো আপস করা হবে না,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।
তিনি আরও যোগ করেন, “ভেজালকারী এবং যারা মান নিয়ে কারচুপি করবে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তীর্থযাত্রীদের স্বাস্থ্য আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা
খাদ্য সুরক্ষা ও ঔষধ প্রশাসনের অতিরিক্ত কমিশনার তাজবর সিং জাগ্গি জানিয়েছেন যে, হরিদ্বার, দেরাদুন, তেহরি, পৌরি এবং উত্তরকাশী জেলা জুড়ে খাদ্য সুরক্ষা কর্মকর্তাদের বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে। এই দলগুলি নিয়মিতভাবে প্যান্ডেল থেকে দুধ, মিষ্টি, তেল, মশলা এবং পানীয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাবে। যদি কোনো নমুনা নির্ধারিত মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
Jharkhand ; দলমায় আদিবাসি সমাজের বিক্ষোভ ঝাড়খণ্ড সরকারের বিরুদ্ধে , বন এবং সংরক্ষণ ঘিরে !
ঐতিহ্য ও বিশুদ্ধতার প্রতি সম্মান
কাঁওয়ার যাত্রা একটি ঐতিহ্যবাহী হিন্দু উৎসব, যেখানে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে বিশুদ্ধতার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখা হয়। পূর্বে, পথের ধারের দোকান এবং খাবারের জায়গাগুলি নিয়ে একটি বড় বিতর্ক ছিল যে, মৌসুমী দোকানগুলির কিছু মালিক ভিন্ন ধর্মীয় পরিচয়ের হওয়ায় তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে বা অন্য কোনো কারণে তাদের স্টলে উপলব্ধ খাবারকে প্রস্তুত প্রণালীর মাধ্যমে দূষিত করতে পারে। তখন থেকেই বিক্রেতাদের সম্পূর্ণ বিবরণ যেমন মালিকের আসল নাম, বৈধ নিবন্ধন এবং লাইসেন্স প্রদর্শন করার দাবি উঠেছিল, যা বর্তমানে সরকারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। এই উদ্যোগটি একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে, তেমনি তীর্থযাত্রীদের ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং বিশুদ্ধতার ধারণাকেও সম্মান জানাবে। কাঁওয়ার যাত্রা ১১ই জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে, যা শ্রাবণ মাসের সূচনাকে চিহ্নিত করবে। এই সময়ে ভক্তরা হরিদ্বার, গোমুখ, গঙ্গোত্রী এবং সুলতানগঞ্জ-এর মতো স্থান থেকে গঙ্গার পবিত্র জল সংগ্রহ করে স্থানীয় শিব মন্দিরে ‘জল অভিষেক’ রীতিতে অর্পণ করেন। এই ঐতিহ্য হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে নিহিত, যার মধ্যে ‘সমুদ্র মন্থন’-এর উল্লেখও রয়েছে।