ব্যুরো নিউজ ২৩ জুলাই ২০২৫ : বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা হাতে ঘুরে বেড়ানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার নিজেদের ‘সত্যিকারের চেহারা’ দেখাচ্ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা দেশগুলোর উপর ১০০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের মতে, এই ‘রক্তাক্ত অর্থের’ মূল অংশীদার ভারত, চীন ও ব্রাজিল— যারা নাকি রাশিয়ার ৮০% অপরিশোধিত তেল কেনে! গ্রাহাম মহাশয় হুমকি দিয়ে বলেছেন, “যদি আপনারা সস্তা রাশিয়ান তেল কেনা চালিয়ে যান, এই যুদ্ধকে জিইয়ে রাখতে, তাহলে আমরা আপনাদের নরক গুলজার করে দেবো, আপনাদের অর্থনীতিকে পিষে দেবো!” আহা, কী মিষ্টি কথা! গণতন্ত্রের নামে এমন ভালোবাসার বার্তা বিশ্ব আগে দেখেনি।
গণতন্ত্রের ‘গুণ্ডামি’ ও ভারতের ‘ধৈর্যের বাঁধ’:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘দ্বিমুখী নীতি’র অভিযোগ এনেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র সাফ জানিয়েছেন, “আমাদের জনগণের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।” অর্থাৎ, নিজের দেশের পেট চালানোটা আমেরিকানদের ‘গণতন্ত্র শেখানো’র চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এমন একটা ইঙ্গিত। মিশ্র মহাশয় আরও বলেছেন, “জ্বালানি সম্পর্কিত বিষয়ে দ্বিমুখী মানদণ্ড না থাকা এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।” এর মানে কি এই যে, আমেরিকা শুধুমাত্র ইউরোপের সমস্যাকে সমস্যা মনে করে, আর বাকি বিশ্বের ‘অস্তিত্বের প্রশ্ন’কে পাত্তা দেয় না?
India US Trade deal : দুগ্ধ খাতের সুরক্ষায় অনড় ভারত: মার্কিন বাণিজ্য আলোচনায় প্রধান বাধা
মার্কিন ব্যর্থতা ও ভারতের সম্ভাব্য ‘পাল্টা জবাব’:
তবে মজার বিষয় হলো, এই পুরো নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদেরই অতীত রেকর্ড। ভারত অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে GE F404 ইঞ্জিন এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার চুক্তি করেছিল, কিন্তু মার্কিন মুলুক সময়মতো সেসব সরবরাহ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ, গণতন্ত্র বিক্রি করার নামে চুক্তি করবে, কিন্তু নিজেদের পণ্য সময়মতো দেবে না – এমনটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো স্বভাব!
এখন যদি এই ‘বড় দাদা’ সত্যি সত্যি ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় বা ভারতীয় রপ্তানিকে টার্গেট করে, তাহলে ভারতও চুপ করে বসে থাকবে না। সূত্রের খবর, ভারত তখন পশ্চিমা দেশগুলোতে সমস্ত রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, সমস্ত! এবং শুধুমাত্র সেইসব দেশের চাহিদা মেটাবে যাদের সাথে স্থানীয় মুদ্রা এবং ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ‘কার্যকর বাণিজ্য সম্পর্ক’ বিদ্যমান। এর মানে কী? এর মানে সম্ভবত পশ্চিমা বিশ্বের ডলার নির্ভর অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা!
NATO : মার্ক রুটের “তেলবাজি”: ভারত-ব্রাজিল-চীনকে হুমকি, নিজেদের মুনাফা নিশ্চিত!
অর্থনীতিতে ‘ফাঁসানো’র খেলা: আমেরিকার ‘ফাঁদ’ বনাম ভারতের ‘ঠান্ডা মাথা’:
যদি ভারত সত্যিই এমন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আমেরিকার ‘ফুলে থাকা অর্থনীতি’র উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ওয়াশিংটন হয়তো ভেবেছিল, ‘সাত মাসের ট্রাম্পীয় শাসনে’ ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হবে, কিন্তু উল্টো রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বেড়েছে। ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটে সাহেবও ভারত, চীন ও ব্রাজিলকে পুতিনের সাথে ‘শান্তি আলোচনার’ জন্য ফোন করতে বলেছেন, নইলে “ব্রাজিল, ভারত এবং চীনের উপর এর বিশাল প্রভাব পড়বে!” বোঝাই যাচ্ছে, পুতিনকে থামাতে না পেরে পশ্চিমারা এখন ‘দুর্বল’ দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।
সব মিলিয়ে, মনে হচ্ছে গণতন্ত্রের এই নতুন সংজ্ঞায়, ‘স্বাধীনতা’ মানে আমেরিকার কথায় চলা, আর ‘সার্বভৌমত্ব’ মানে আমেরিকার স্বার্থে কাজ করা। কিন্তু ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে, তাদের নিজেদের ‘উইজডম’ আছে, এবং তারা শুধু ‘গণতন্ত্র’ নয়, ‘পেটের ভাত’ও বোঝে! এখন দেখার পালা, এই ‘হুমকির খেলায়’ কে কাকে ‘শাস্তি’ দেয় আর কার অর্থনীতি আসলে ‘পিষ্ট’ হয়!