Dalma protest Jharkhand

ব্যুরো নিউজ ০২ জুলাই : প্রকৃতি ও মানব সমাজের এক অচ্ছেদ্য সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান। তবে যখন পরিবেশ সুরক্ষার নামে মানব সংস্কৃতির শেকড়ে আঘাত আসে, তখন তৈরি হয় এক জটিল সংঘাত। ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে দলমা অঞ্চলের ইকো-সেনসিটিভ জোন (Eco-Sensitive Zone) ঘোষণার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে হাজার হাজার গ্রামবাসীদের প্রতিবাদ সেই সংঘাতেরই প্রতিচ্ছবি। এটি কেবল একটি আঞ্চলিক আন্দোলন নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার এক বৃহত্তর আলোচনার অংশ। এই প্রতিবাদ স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পরিবেশ রক্ষা যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানকারী মানবগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ।

আদিবাসীদের প্রতিবাদ মিছিল: ভূমি অধিকারের দাবি

মঙ্গলবার, কোলহান অঞ্চলের হাজার হাজার গ্রামবাসী জামশেদপুরের জেলা কালেক্টরেটের দিকে এক বিশাল মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান। দলমা ক্ষেত্র গ্রামসভা সুরক্ষা মঞ্চের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ সংঘটিত হয়, যেখানে দলমা অঞ্চলকে ইকো-সেনসিটিভ জোন ঘোষণার চেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপের আড়ালে আদিবাসী এবং ঐতিহ্যবাহী বনবাসীদের তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা চলছে। পাটামদা, চান্দিল, বোদাম, ডিমনা, পারডিহ, গালুডিহ, ঘাটশিলা এবং মুসাবানি অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রথমে আমবাগান মাঠে সমবেত হন এবং সেখান থেকে স্লোগান ও ব্যানার হাতে ডিসি অফিসের দিকে মার্চ করেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী এই বিক্ষোভে অংশ নেন, প্ল্যাকার্ড হাতে ভূমি অধিকার এবং উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান।

Bihar ; বিহারের ঐতিহাসিক ই-ভোটিং উদ্যোগ: গণতন্ত্রে নতুন দিগন্ত?

বন দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও আইনি জটিলতা

বিক্ষোভকারীরা বন দপ্তরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তাদের মতে, বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও বন অধিকার আইন (Forest Rights Act) অনুযায়ী তাদের জমির মালিকানা অস্বীকার করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত জমির শিরোনামের (individual land titles) জন্য করা আবেদনগুলি হয় উপেক্ষা করা হচ্ছে অথবা কোনো সমাধান ছাড়াই ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বক্তারা পৈতৃক বাড়ির জন্য জমির নথিপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দাবি করেন যে, গ্রামসভাগুলির সম্মতি ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। তারা তাদের অধিকারের স্বীকৃতি, উচ্ছেদ বন্ধ এবং এই বিষয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

সহযোগী সংগঠন ও বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপট

ঝাড়খণ্ড গ্রামসভা সুরক্ষা মঞ্চ, আদিবাসী ভূমি মুন্ডা যুবা সংগঠন, আদিবাসী সম্প্রভূতা সমিতি, স্বরাজ সোসিও ইকোনমিক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, ঝাড়খণ্ড জনতান্ত্রিক মহাসভা, আদিবাসী জন মঞ্চ এবং বিরসা সেনা সহ একাধিক সংগঠন এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছে। এই ব্যাপক সমর্থন প্রমাণ করে যে, এই ইস্যুটি কেবল একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের নয়, বরং আদিবাসী সম্প্রদায়ের বৃহত্তর অংশের এবং পরিবেশ-সংস্কৃতি সংযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক।

প্রভাবের আড়ালে নৈরাজ্য ; জানুন রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ধর্ষকের চরিত্র ।

সহাবস্থান ও দীর্ঘ উন্নয়নের পথ

দলমা অঞ্চলের এই প্রতিবাদ পরিবেশ সুরক্ষা এবং মানব সমাজের অধিকারের মধ্যে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ইকো-সেনসিটিভ জোন ঘোষণার উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে পরিবেশ রক্ষা, কিন্তু এটি করার সময় সেই অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের জীবনযাপন, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে উপেক্ষা করা যায় না। পরিবেশ এবং মানব সংস্কৃতি, উভয়ই সংরক্ষণের যোগ্য। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন এমন একটি সমাধান, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী অধিকারকে সম্মান করবে এবং তাদের সহাবস্থানের দীর্ঘ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখবে। এটিই হতে পারে একমাত্র উন্নয়নের প্রকৃত পথ, যেখানে প্রকৃতি এবং মানবজাতি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিকশিত হবে, প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর