ব্যুরো নিউজ ২৭ মে : লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। মঙ্গলবার সকালে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের ছোট পুত্র তেজস্বী যাদবের পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে। এই খুশির খবর পেয়েই নবজাতককে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি যাদব পরিবারকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আসন্ন বিহার বিধানসভা ভোটে এই নবজাতক রাষ্ট্রীয় জনতা দলের জন্য ‘সৌভাগ্য’ নিয়ে আসবে বলেও মন্তব্য করেন, যা পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
লালু পরিবারে নতুন সদস্য
কলকাতায় তেজস্বীর পুত্রসন্তান মঙ্গলবার সকাল থেকেই লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবারে উৎসবের মেজাজ। আরজেডি প্রধান ফের দাদু হলেন। তাঁর ছোট পুত্র তেজস্বী যাদব এবং পুত্রবধূ রাজশ্রীর কোল আলো করে এল এক পুত্রসন্তান। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম হয়। সদ্যোজাত সন্তানের ছবি তেজস্বী যাদব নিজেই তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর আগমন ও ‘সৌভাগ্য’র বার্তা
বিহার ভোটের প্রসঙ্গ তেজস্বীর পুত্রসন্তান জন্মের খবর পেয়েই দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি যাদব পরিবারকে শুভেচ্ছা জানান। তেজস্বীকে পাশে নিয়ে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তেজস্বীর পরিবারে খুশির খবর। লালু যাদবকে অনেক শুভেচ্ছা। এই সন্তান সুখ শান্তি নিয়ে আসবে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও দাবি করেন যে তেজস্বীর পুত্রসন্তান সুস্থ আছে। সেইসঙ্গে মজার ছলে বলেন, “বাবা-মা সুন্দর, সন্তানও সুন্দর হয়েছে।” হালকা মেজাজে কথা বলার ফাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী আসন্ন বিহার ভোটের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটে লালুপ্রসাদ যাদবের দলের (আরজেডি) জন্য এই নবজাতক সৌভাগ্য নিয়ে আসবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পরিবারতন্ত্রের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য, যেখানে একটি সদ্যোজাত শিশুর আগমনকে আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, তা ভারতের রাজনীতিতে বংশবাদ ও পরিবারতন্ত্রের বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। লালুপ্রসাদ যাদব এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিহারের রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাঁর অবর্তমানে তেজস্বী যাদব আরজেডি-র নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং পিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহন করছেন। এই পরিস্থিতিতে তেজস্বীর পুত্রসন্তানের আগমনকে সরাসরি নির্বাচনী সৌভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি সমালোচকদের মতে, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকে আরও সুসংহত করার ইঙ্গিত বহন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য যোগ্যতা বা আদর্শের চেয়ে বংশগত পরিচয়ের ওপর জোর দেয়, যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
যাদব পরিবারের নতুন প্রজন্ম ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২১ সালে তেজস্বীর সঙ্গে রাজশ্রীর বিয়ে হয়। ২০২৩ সালে তাঁদের কোলে আসে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। আর এবার পরিবারে এল এক পুত্রসন্তান। যাদব পরিবারের রাজনৈতিক যাত্রা বহু দশক ধরে চলে আসছে, যেখানে পরিবারের একাধিক সদস্য বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত থেকেছেন। নতুন প্রজন্মের এই আগমন স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেকে। সদ্যোজাতকে দেখতে রবিবারই যাদব পরিবারের সদস্যরা কলকাতায় চলে আসেন, যা পারিবারিক বন্ধন এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব দুইই তুলে ধরে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর ও পারিবারিক আগমন
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সন্তান এবং মা দু’জনেই এখন ভালো আছেন। সোমবার রাতেই কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তেজস্বীর স্ত্রীকে। সেখানে মঙ্গলবার সকালে তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। গোটা যাদব পরিবার এই মুহূর্তে নতুন সদস্যের আগমনে অত্যন্ত আনন্দিত।