Suvendu Adhikari Uttarkanya Aviyan

ব্যুরো নিউজ ২২ জুলাই ২০২৫ : প্রতি বছরের মতো এবারও ২১শে জুলাইয়ের শহিদ দিবস উপলক্ষে কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ঠিক একই সময়ে, উত্তরবঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিজেপির যুব মোর্চার নেতৃত্বে শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত হলো বহু প্রতীক্ষিত ‘উত্তরকন্যা অভিযান’। এই জোড়া কর্মসূচি বাংলার রাজনৈতিক আবহকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বের অনানুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

শিলিগুড়িতে বিজেপির ‘উত্তরকন্যা অভিযান’: ‘পবিত্রকরণ’ ও আক্রমণের সুর

এদিন সকালে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার নেতৃত্বেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা শিলিগুড়ির মহকুমা পরিষদ চত্বরের কাছে চুনাবাট্টি থেকে উত্তরকন্যার দিকে পদযাত্রা করেন। এই কর্মসূচির মূল স্লোগান ছিল “২৬-এর নির্বাচন, তৃণমূলের বিসর্জন”, যার মাধ্যমে বিজেপি ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল স্পষ্ট করে দিয়েছে।
শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ কর্মসূচির শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন। তার সাফ কথা, “তৃণমূলের চোর নেতা, মন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর কারণে ‘উত্তরকন্যা’ অপবিত্র হয়েছে। আমরা এই অভিযান করে উত্তরকন্যাকে পবিত্র করব।” এই মন্তব্যে অভিযানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সুর স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

PM Modi : বাংলার সিন্ডিকেট রাজে শিল্প নেই, অসুরক্ষিত নারী এবং কর্মসংস্থান : বক্তব্য রাখলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী

শুভেন্দু অধিকারীর সুর চড়া, নিশানা মুখ্যমন্ত্রীকে

উত্তরকন্যা অভিযান থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন। তার অভিযোগ, প্রশাসন ২১শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গে অন্য কোনো কর্মসূচি করতে দেয়নি, কারণ “রানিমা, পিসিমা, চোরেদের রানি ধর্মতলায় সভা করছে।” তিনি আরও বলেন, “কয়েক হাজার দাগী চোর, আজ কয়লা চুরি, গাছ চুরি, গরু পাচার, ইঁট চুরি, পায়খানা চুরি বন্ধ রয়েছে। কারণ আজ চোরেদের জমায়েত হয়েছে।” জলঙ্গির এক তৃণমূল নেতাকে মদ্যপ অবস্থায় সমাবেশে যোগ দেওয়ার অভিযোগও তোলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ২৬-এর বিধানসভায় ফের ক্ষমতায় আসার চ্যালেঞ্জ করেছেন উল্লেখ করে শুভেন্দু পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করছি ২৬-এ আপনাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব।”
এছাড়াও শুভেন্দু অধিকারী একাধিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন:

  • ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR): তিনি বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (Special Intensive Revision – SIR) দাবি জানান। তার দাবি, ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা শরণার্থী, বহিরাগত নন, এবং তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভারতীয় মুসলিমদের চিন্তার কোনো কারণ নেই, কিন্তু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমানদের একটিকেও ভোটার হিসেবে থাকতে দেওয়া হবে না। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এই প্রসঙ্গে ১.৫ কোটিরও বেশি ‘ভুতুড়ে ভোটার’-এর অভিযোগ তুলে ‘পরিষ্কার ভোটার তালিকা, পরিষ্কার সরকার’-এর দাবি জানান।
  • ভোট কারচুপির অভিযোগ: প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে হারানোর পেছনে অরবিন্দ মিনা ও এসপি-র হাত রয়েছে অভিযোগ করে শুভেন্দু বলেন, “দুজন কাউন্টিং বুথে ঢুকে ক্যামেরা বন্ধ রেখে ছাপ্পা মেরেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রমাণ করে দেব।”
  • উন্নয়ন ও বঞ্চনার অভিযোগ: শুভেন্দু অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরবঙ্গে এইমস (AIIMS) করতে চাইলেও রাজ্য সরকার জায়গা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, “হিন্দুরা বাঁচতে চাইলে এই মহিলাকে সরাতে হবে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, রাজ্য সরকার উত্তরকন্যা অভিযানে প্রশাসনকে দিয়ে ‘আরেকটা উলেন বর্মন’ করার চেষ্টা করেছে। তার দাবি, উত্তরবঙ্গে বালি-পাথর পাচার করে তৃণমূল সবকিছু শেষ করেছে এবং পাহাড়-চা বাগানে বঞ্চনা অব্যাহত। চা শ্রমিকরা মজুরি পান না, এবং চা বাগানের জমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হর্ষ নেওটিয়াদের কাছে বেচার কাজ করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
  • নারী সুরক্ষা: শুভেন্দু উপস্থিত বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “নারী সুরক্ষার দাবিতে এই অভিযান। এখানে মহিলারা কেউ সুরক্ষিত নন। মাটিগাড়ার ক্লাস ১০-এর ছাত্রী, কালিয়াগঞ্জের রাজবংশী মেয়েদের কী করেছে তা মনে রাখবেন। কাউকে ছাড়া হবে না।”

BJP : তৃণমূলের শহীদ দিবসের কর্মসূচীর মান নিয়ে কটাক্ষ , গোটা বঙ্গে বিজেপির কর্মসূচী !

আইনি জয় ও সাংগঠনিক শক্তি

এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়ি জুড়ে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ একাধিক জেলা থেকে প্রচুর বিজেপি কর্মী-সমর্থক ভিড় জমান। বাসে করে এসে তারা এই অভিযানে যোগ দেন, যা উত্তরবঙ্গে বিজেপির শক্তিশালী সমর্থন ভিত্তির প্রমাণ।
বিশেষত, হাইকোর্টের নির্দেশের পর এশিয়ান হাইওয়ে ২-এর উপর উত্তরকন্যার সামনে প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমতি পাওয়াকে বিজেপি একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে দেখছে। এটি উত্তরবঙ্গে তাদের শক্তিশালী অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণগুলিতে একটি স্পষ্ট ধর্মীয় সুর ছিল, যা রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে একত্রিত করার দলের কৌশলকে তুলে ধরে।
এই কর্মসূচিতে প্রাক্তন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, অর্জুন সিং, দশরথ তিরকি এবং বর্তমান সাংসদ ড. জয়ন্ত রায় ও মনোজ টিগ্গাসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা উপস্থিত ছিলেন। বিজেওয়াইএম (BJYM) রাজ্য সভাপতি ড. ইন্দ্রনীল খান নারী সুরক্ষার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন এবং আরজি কর হাসপাতাল, কসবা ল কলেজ এবং রাজ্যের অন্যান্য স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির উদাহরণ দেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, দুর্নীতির সাথে জড়িত তৃণমূল নেতারা এখন পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে “নারীদের উপর আক্রমণ” চালাচ্ছে।

একই দিনে ধর্মতলা এবং শিলিগুড়িতে এই দুটি বড় সমাবেশ বাংলার রাজনৈতিক বিভাজন এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য উভয় দলের প্রস্তুতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর