ব্যুরো নিউজ, ১৯ ফেব্রুয়ারি: আবারও হাইকোর্টে বড় ধাক্কা রাজ্য সরকারের। বারবার ১৪৪ ধারা জারি করে বিরোধীদের সন্দেশখালি যাওয়া আটকানোর চেষ্টা করলেও কোর্টে বারবারই রাজ্য সরকারকে দাঁড়াতে হচ্ছে কাঠগড়ায়। ৫ই জানুয়ারি থেকে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। সেই থেকেই কার্যত দিশেহারা সরকার। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছিল বটে, কিন্তু হাইকোর্ট প্রশ্ন, সমস্ত ব্লকে কি এমন ঘটলো যার জন্য ১৪৪ ধারা সব জায়গায় জারি করতে হলো? আর তাতেই কোণ ঠাসা রাজ্য সরকার।
সন্দেশখালি: এখনও অধরা শাহাজাহান
কিন্তু ভবি ভোলার নয়। রাজ্য পুলিশ বেছে বেছে যেসব জায়গায় বিজেপি ও বিরোধী দলগুলি যেতে পারে সেখানেই জারি করে ১৪৪ ধারা। আর এভাবেই কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন দল ও কর্তাদের সন্দেশখালি ঢোকার মুখে পরতে হচ্ছে পুলিশি বাধার মুখে। এরপর সন্দেশখালি যান খোদ বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও কোনও পরিবর্তন হলনা। তার বাস অনেক আগেই আটকে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দেন, তারা কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। কারণ ১৪৪ ধারা মেনে তারা চারজন যেতে চাইলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেই মামলায় হাইকোর্ট সোমবার জানিয়ে দিল আগামী ৭ দিন সেখানে স্থগিত থাকবে ১৪৪ ধারা। ফলে রাজ্য পুলিশ ১৪৪ ধারাকে হাতিয়ার করে আর কোনভাবেই আটকাতে পারবেনা বিরোধীদের। তবে দুষ্টের ছলের অভাব হয় না, নতুন কি ছকে বা ছলে বিরোধীদের আটকাবে সেই প্যাচ পয়জার কোষছে রাজ্য সরকার।
১৪৪ ধারায় স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ্র। তিনি আরো নির্দেশ দেন সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতে পরিদর্শন করতে যেতে পারবে মামলা কারীরা। বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীও যেতে পারবেন সেখানে। তবে সেখানে কোনও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য রাখা যাবে না। আর পরিদর্শন করতে যাওয়ার তিন ঘন্টা আগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে হবে পুরো বিষয়টা। কবে, কখন যেতে চান বিস্তারিত জানাতে হবে। পরবর্তী শুনানির দিন এসপি বসিরহাট সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা দেবে এবং রাজ্যকেও হলফ নামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সন্দেশখালিতে এতদিন কোনও বিরোধী নেতা-নেত্রীকে ঢুকতে দেয়নি রাজ্য সরকার। প্রতিবাদী মহিলা টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়ালকে বাসন্তীতে আটকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, সুকান্ত মজুমদার, সুজন চক্রবর্তীর-সহ সেন্ট্রাল হাই পাওয়ার কমিশন কাউকে সন্দেশখালিতে যেতে দেওয়া হয়নি। জাতীয় তপশিলি কমিশনকে ঢুকতে দিলেও সহযোগিতা করেনি রাজ্য পুলিশ- প্রশাসন। সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতায় তারা পরিদর্শন করে ওইসব এলাকা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও ফিরে আসতে হয় মাঝ রাস্তা থেকেই। যুক্তি ছিল তিনি সন্দেশখালিতে গেলে আরও বেশি মানুষ একত্রিত হবে এবং যার ফলে আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
শুভেন্দুর সন্দেশখালি যাওয়া নিয়ে সেন্ট্রাল IB-র একটি রিপোর্ট তুলে ধরে রাজ্য সরকার। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই নাকি রাজ্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে সন্দেশখালিতে। তবে আজ বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু অধিকারী সংবাদমাধ্যমকে জানায় আগামীকাল দেখা হচ্ছে সন্দেশখালিতে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তার উত্তরে তিনি বলেন, রাজ্যের পরিস্থিতি এমনই যে বহু আগেই রাষ্ট্রপতি শাসনের দরকার ছিল এখন বর্তমানে সেটি বট বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সমস্ত সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কারোর অস্তিত্ব নেই, হিউম্যান রাইটস কমিশন নেই, এস সি কমিশন নেই, মহিলা কমিশন ও শিশু সুরক্ষা কমিশন নেই। এমনকি রাজভবনকে মানে না, হায়ার জুডিশিয়ারি মানে না, বিধানসভা মানে না এই সরকার। ফলে আগামী দিনে এটাই দেখার যে, শুভেন্দু অধিকারী সন্দেশখালিতে গেলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোর নেয়। ইভিএম নিউজ