ব্যুরো নিউজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : জনপ্রিয় ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গার্গ সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় ৫২ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতজুড়ে, বিশেষত তার নিজ রাজ্য অসমে। শনিবার তার মরদেহ গুয়াহাটিতে পৌঁছানোর পর থেকে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব শোকযাত্রা, যেখানে লাখো মানুষ তাদের প্রিয় শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন।
দুর্ঘটনা ও মৃত্যু
জুবিন গার্গ সিঙ্গাপুরে ‘নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল’-এ সঙ্গীত পরিবেশন করার জন্য গিয়েছিলেন। উৎসবের আয়োজকরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জুবিন শুক্রবার সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা গেছে, তিনি স্কুবা ডাইভিং করার সময় আহত হন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মৃত্যুর কারণ হল জলে ডুবে যাওয়া। এই ঘটনায় উৎসবের আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
শেফালি জারিওয়ালার অকাল প্রয়াণ: এক ঝলমলে তারকার করুণ বিদায়
অসমের শোকযাত্রা: থমকে গেল জীবনযাত্রা
জুবিনের মরদেহ গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছলে তার স্ত্রী, গরিমা, শোকে ভেঙে পড়েন। বিমানবন্দর থেকে তার বাসভবন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জুবিনকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এই শোকমিছিলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও অংশ নেন। ফুলে সাজানো অ্যাম্বুলেন্সটি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল, আর মানুষ ফুল ছুঁড়ে দিচ্ছিল, প্রার্থনা করছিল, এবং ‘জয় জুবিন দা’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল। এই কারণে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে অ্যাম্বুলেন্সের শহরের মধ্যে দিয়ে যেতে।
শোকের কারণে গুয়াহাটি শহরে এক ‘ব্ল্যাক ডে’ পালিত হয়। দোকানপাট, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় বন্ধ থাকে। কিছু জায়গায় অবশ্য জুবিনের ভক্তদের দ্বারা দোকান বন্ধ করার চাপও সৃষ্টি হয়। শহরের জনাকীর্ণ রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে।
স্মৃতিসৌধের ঘোষণা ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জুবিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাকে ‘আমাদের প্রিয় সন্তান’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার জুবিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। অসম সরকার জুবিনের স্মৃতিতে তার গ্রাম কামারকুচিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার চিতাভস্ম জোরহাটে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে আরও একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে জুবিনের শেষকৃত্য ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশোক সিংহল এবং সঙ্গীতশিল্পী অনু মালিকও জুবিনের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। রাহুল গান্ধী লিখেছেন, “তার কণ্ঠস্বর একটি প্রজন্মকে সংজ্ঞায়িত করেছে।” অশোক সিংহল বলেন, “অসম শুধু একটি কণ্ঠস্বর নয়, একটি হৃদস্পন্দন হারাল।” অনু মালিক জুবিনের সামাজিক কাজের প্রতি তার নিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন।
Akshay Kumar : ৫৮ বছরে পা দিলেন অক্ষয় কুমার, নিজের জীবন এবং কাজ ভক্তদের উৎসর্গ করলেন
জুবিনের অমর সৃষ্টি
তিন দশকেরও বেশি সময়ের কর্মজীবনে জুবিন গার্গ ৪০টিরও বেশি ভাষা ও উপভাষায় ৩৮,০০০ এরও বেশি গান গেয়েছেন। তার সবচেয়ে বড় বলিউড হিট ছিল ২০০৬ সালের ‘গ্যাংস্টার’ ছবির ‘ইয়া আলি’ গানটি, যা তাকে ‘গ্লোবাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’-এ সেরা প্লেব্যাক সিঙ্গারের পুরস্কার এনে দেয়। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয় এবং সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। জুবিনকে প্রায়শই ‘হামিং-এর রাজা’ বলে অভিহিত করা হত। তার ভক্তরা বিশ্বাস করেন, জুবিন চলে গেলেও তার গান তাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।