history of lal selam

সৌরভ রায় চৌধুরী , ১২ জুলাই ২০২৫ : ‘সেলাম’ এবং ‘সালাম’ শব্দ দুটি একই মূল থেকে উদ্ভূত এবং একই অর্থ বহন করে। এই শব্দ দুটির উৎপত্তি মূলত আরবি ভাষা থেকে।

‘সালাম’ শব্দের অর্থ ও উৎপত্তি

‘সালাম’ (سَلَام) একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম এবং আনন্দ। এটি একটি সম্মানসূচক অভিবাদনমূলক শব্দ। ইসলামের পরিভাষায়, কাউকে “আস-সালামু আলাইকুম” বলার মাধ্যমে তার ওপর শান্তি বর্ষিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়। এর উত্তরে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম” বলা হয়, যার অর্থ ‘আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক’।

উৎপত্তি: ‘সালাম’-এর উৎপত্তি ইসলাম ধর্মের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ)-কে ‘সালাম’-এর শিক্ষা দেন। একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ আদম (আঃ)-কে ফেরেশতাদের সালাম দিতে নির্দেশ দেন এবং ফেরেশতাদের উত্তর মন দিয়ে শুনতে বলেন। সেই অনুযায়ী আদম (আঃ) ফেরেশতাদের “আসসালামু আলাইকুম” বলেন এবং ফেরেশতারা “আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে উত্তর দেন।

এছাড়াও, ‘আস-সালাম’ ইসলামে আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম, যার অর্থ ‘যিনি সমস্ত দোষ ও ত্রুটি থেকে মুক্ত’ বা ‘শান্তিময়’। এই দিক থেকেও ‘সালাম’ শব্দের গভীর তাৎপর্য রয়েছে।

বাম শাসিত কেরলে ‘ ভারত মাতা ‘ র প্রতীকে ‘ না ‘ ! বাতিল হল পরিবেশ দিবস !

‘সেলাম’ ও ‘সালাম’ – শব্দের বিবর্তন

‘সেলাম’ শব্দটি আসলে ‘সালাম’ শব্দেরই একটি লোকমুখে প্রচলিত বা অপভ্রংশ রূপ। উচ্চারণের ভিন্নতার কারণে এটি ‘সেলাম’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এর মূল অর্থ ও উৎপত্তি ‘সালাম’-এর মতোই। ভাষাগত বিবর্তনের কারণে অনেক সময় মূল শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং সেই পরিবর্তিত রূপটিই প্রচলিত হয়ে ওঠে।

CPIM ; কৌটো নাচানো ছাড়া ইনসেন্টিভে বামপন্থীদের আপত্তি – ভারত সরকারের ELI স্কিমে বিরোধিতার কারণ !

বামপন্থীরা কেন এই শব্দটি ব্যবহার করে?

বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শে ‘লাল সেলাম’ স্লোগানের ব্যবহার এক বিশেষ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে। এর কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: অবিভক্ত ভারতবর্ষে আর্য সংস্কৃতির প্রভাব এবং পরবর্তীতে মুঘল ও ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বামপন্থীরা প্রায়শই ঔপনিবেশিক প্রভাবের বিরোধিতা করে এবং প্রাচীন আর্য সংস্কৃতিকে একটি পৌরাণিক গল্প হিসেবে দেখে, যা তাদের কাছে আধুনিক এবং সাম্যবাদী আদর্শের পরিপন্থী। তাদের দৃষ্টিতে, প্রাচীন ভাষাগত ঐতিহ্যগুলি সময়ের সাথে সাথে তার মাধুর্য হারিয়েছে।
  • বিপ্লবী স্লোগান হিসেবে: ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির পর ভারতবর্ষে বামপন্থী আন্দোলনের উত্থান ঘটে। ‘লাল বিপ্লব’ এবং কমিউনিস্টদের স্লোগান হিসেবে ‘লাল সেলাম’ একটি প্রতীকী সম্মানসূচক অভিবাদন হিসেবে গৃহীত হয়। এখানে ‘লাল’ শব্দটি বিপ্লব ও সাম্যবাদের প্রতীক, এবং ‘সেলাম’ (সালামের অপভ্রংশ) শব্দটি সম্মান ও সংহতির অর্থে ব্যবহৃত হয়।
  • মিশ্র সংস্কৃতির প্রচলন: কমিউনিস্টরা প্রায়শই একটি মিশ্র সংস্কৃতির প্রচলন করতে চেয়েছে, যেখানে প্রচলিত পৌত্তলিক পূজা-অর্চনা এবং সংস্কৃতির মধ্যে ‘বেদ’ বা প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থগুলির প্রভাবকে সীমিত করার প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রেক্ষাপটে, ‘সালাম’ শব্দটি, যা ‘শান্তি’ বা ‘অভিবাদন’ বোঝায় এবং যার একটি সার্বজনীন আবেদন রয়েছে, তা একটি অসাম্প্রদায়িক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এটি প্রচলিত ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে একটি নতুন পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করে।
  • ‘সালাম’ (Salām): এই শব্দের অর্থ ‘শান্তি’ বা ‘অভিবাদন’। বামপন্থীরা এই অর্থকে তাদের ‘বিপ্লবী শান্তি’ বা ‘শ্রেণিহীন সমাজের প্রতি অভিবাদন’ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর