ব্যুরো নিউজ ২৬শে আগস্ট ২০২৫ : বিহারের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর বরিষ্ঠ নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকী দারভাঙ্গায় একটি দলীয় সভায় মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র আগে এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিজেপি-কে নিশানা করে মন্তব্য
সভায় বক্তব্য রাখার সময় সিদ্দিকী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-কে হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমাদের হিন্দু ভাইদের ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, সংবিধান এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস সম্পর্কে আরও সচেতন করা প্রয়োজন।” একটি “নির্দিষ্ট সংস্থা” হিন্দুদের “উত্তেজিত” করার চেষ্টা করছে – তার এই মন্তব্যে বিতর্ক আরও বাড়ে। বিরোধীরা তাকে সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ শেখানোর জন্য শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করার অভিযোগ তোলে। তবে আব্দুল বারি সিদ্দিকী কোন ‘পূর্বপুরুষদের ইতিহাস সম্পর্কে ‘ হিন্দুদের অবহিত করতে চাইছেন সেই বিষয় পরিস্কার নয় । যদি তা মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বা দিল্লির সুলতানদের ইতিহাস বা প্রাদেশিক নবাবদের ইতিহাস হয় তাহলে এই মন্তব্য নিছক বার্তা নয় – এক সংস্কৃতি অবমাননার হুমকি !
Bihar : ইন্ডি জোটের রাজনীতিতে বিভ্রান্ত জনসাধারণ ! ক্ষুব্ধ বিহারের মিনতা দেবী
বিতর্কের মুখে সিদ্দিকীর সাফাই
ব্যাপক সমালোচনার মুখে সিদ্দিকী সংবাদমাধ্যমের সামনে তার মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার কথাগুলো প্রসঙ্গের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্য তার ছিল না। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সব সম্প্রদায়েরই দেশকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব আছে। সংবিধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু উভয় অংশের কথাই বলা আছে।”
সিদ্দিকী আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উসকানিতে যারা উগ্রবাদে ঝুঁকছেন, তার মন্তব্য তাদের জন্য। তিনি তার প্রাথমিক মন্তব্য সংশোধন করে বলেন, “শুধুমাত্র হিন্দু নয়, সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধ বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।”
সমালোচনা ছাড়া যে সুবুদ্ধির উদয় তোষণবাদ রাজনীতিতে হয়না তা এই বিক্ষোভ পরবর্তী পরিবর্তিত উক্তি প্রমাণ করে । যদিও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্ম কে ‘ গন্ধা ধর্ম ‘ বলে কোনও সাফাই দেওয়া হয়না , চরম স্বৈরাচারীর লক্ষণ ।
Congress : কংগ্রেসের ‘ ভোট চুরি ‘ অভিযোগ ভিত্তিহীন, ভোটার সংখ্যার হেরফের নিয়ে গবেষণা ভুল প্রমাণিত, ক্ষমা চাইলেন রাজনৈতিক সমীক্ষক
‘ব্রিটিশ, কংগ্রেস নয়’
আলাদা একটি বিতর্কে, সিদ্দিকীকে ভারতের ঔপনিবেশিক অতীত নিয়ে একটি ভুল মন্তব্য করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল যে তিনি নাকি বলেছেন, “দেশ একসময় কংগ্রেসের গোলাম ছিল।” এর উত্তরে সিদ্দিকী তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমি অবাক হয়েছি যে এমন একটি মন্তব্য আমার থেকে এসেছে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো ভুলবশত মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, তাই আমি পুরো ভিডিওটি দেখেছি।”সিদ্দিকী পরিষ্কারভাবে বলেন যে তিনি উপনিবেশের প্রসঙ্গে কখনও কংগ্রেসের নাম উল্লেখ করেননি এবং তিনি শুধুমাত্র ব্রিটিশদেরকেই ভারতের উপনিবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলেছি যে দেশ ব্রিটিশদের দ্বারা পরাধীন ছিল, কংগ্রেসের দ্বারা নয়।” তিনি অভিযোগ করেন যে কিছু ব্যক্তি তার কথা বিকৃত করেছে, যদিও তিনি তাদের নাম উল্লেখ করেননি।
সিদ্দিকী তার মন্তব্যের মাধ্যমে সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য ও বোঝাপড়া বাড়ানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম সব ধর্মের মানুষ একসাথে লড়েছিল। কেউ যদি রাজনৈতিক লাভের জন্য হিন্দু, মুসলিম, শিখ বা খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভেদ করার চেষ্টা করে, তবে তা নিন্দনীয়।” রাজনৈতিক আবেগ প্রবণ মন্তব্যে একজন নেতার অভিসন্ধি এবং অভিপ্রায় লুকিয়ে থাকে ,এবং এক্ষেত্রে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আরজেডির তোষণ পন্থা এবং কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা এই তোষণ নিতিতেই ! তার এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশে ধর্মীয় সংবেদনশীল আলোচনার প্রকৃতি নিয়ে একটি বৃহত্তর বিতর্ক তৈরি করেছে।