VP resignation stirs Indian politics

ব্যুরো নিউজ ২২ জুলাই ২০২৫ : গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরের আকস্মিক পদত্যাগ ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি ‘স্বাস্থ্যগত কারণ’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করলেও, বিরোধী দলগুলির নেতারা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাদের দাবি, এই পদত্যাগের পেছনে ‘আরও গভীর কারণ’ রয়েছে।

রাহুল গান্ধী ও জয়রাম রমেশের সন্দেহ: 

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার ধনখরের পদত্যাগের কারণ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ঘোষিত স্বাস্থ্যগত কারণের বাইরেও ‘অনেক গভীর কারণ’ থাকতে পারে। তার দলের এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে রমেশ উল্লেখ করেছেন যে, গত ২১ জুলাই, সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪:৩০-এর মধ্যে নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু ঘটেছিল, যা ধনখরের পদত্যাগের দিকে পরিচালিত করেছে।
ঘটনার অনুক্রম ব্যাখ্যা করে রমেশ জানান, বিকেল ৪:৩০-এ জগদীপ ধনখরের সভাপতিত্বে বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটি (বিএসি) পুনরায় বৈঠকে বসে। তিনি বলেন, কমিটি মন্ত্রী জেপি নাড্ডা এবং কিরেণ রিজিজু-র জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু তারা উপস্থিত হননি। ধনখরকে ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানানো হয়নি। এই অপ্রত্যাশিত অনুপস্থিতির কারণে তিনি পরবর্তী বিএসি বৈঠক আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ১টায় পুনরায় নির্ধারণ করেন। রমেশের মতে, দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪:৩০-এর মধ্যে নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু ঘটেছে, যার ফলে নাড্ডা এবং রিজিজু ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন।
রমেশ আরও দাবি করেন, “এখন, সত্যিই নজিরবিহীন এক পদক্ষেপে, শ্রী জগদীপ ধনখর পদত্যাগ করেছেন। তিনি স্বাস্থ্যগত কারণ উল্লেখ করেছেন। সেগুলোকে সম্মান করা উচিত। কিন্তু এটিও একটি বাস্তব যে তার পদত্যাগের পেছনে আরও অনেক গভীর কারণ রয়েছে।” তিনি ধনখরের পদত্যাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যার সম্ভাব্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

Jagdeep Dhankhar : ভারতীয় উপরাষ্ট্রপতির পদত্যাগ: এক কর্মতত্পর অধ্যায়ের অবসান

পাপ্পু যাদব এবং সঞ্জয় রাউতের বিস্ফোরক মন্তব্য:

পূর্ণিয়ার সাংসদ পাপ্পু যাদব, যিনি রাহুল গান্ধীর একজন কট্টর সমর্থক, সরাসরি বিজেপির উপর দোষ চাপিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, ধনখরের নিরপেক্ষ আচরণ ক্ষমতার অনেককে খুশি করতে পারেনি, এবং এর জেরেই তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। যাদব আরও অভিযোগ করেন যে, রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের বক্তব্যের সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার কথিত মন্তব্য – “কিছুই রেকর্ড হবে না, আমি যা বলব শুধু তাই রেকর্ড হবে” – উপরাষ্ট্রপতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। যাদব বলেন, “চেয়ারের প্রতি সেই অপমান তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। এর সঙ্গে তার স্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।”
অন্যদিকে, শিবসেনা (ইউবিটি)-এর সাংসদ সঞ্জয় রাউত মঙ্গলবার উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরের পদত্যাগে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, পর্দার আড়ালে ‘বড় রাজনীতি’ চলছে, এবং তা শীঘ্রই প্রকাশ পাবে। তিনি আরও বলেন যে, উপরাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কোনো সাধারণ ঘটনা নয় এবং ‘সেপ্টেম্বরে অবশ্যই কিছু একটা ঘটবে’। তিনি স্বাস্থ্যগত কারণকে বিশ্বাস করতে নারাজ বলে মন্তব্য করেন, কারণ তিনি গতকালও ধনখরকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তিনি সুস্থই ছিলেন।

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন:

কংগ্রেসের যোগাযোগ বিভাগের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এই পদত্যাগ “যেমন বিস্ময়কর তেমনি অকল্পনীয়” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি X-এ লিখেছেন যে, “নিঃসন্দেহে শ্রী ধনখরকে তার স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে, তার এই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের পেছনে যা চোখে পড়ে তার চেয়েও বেশি কিছু আছে।”
কংগ্রেস নেতা আরও উল্লেখ করেছেন যে, ধনখর তার কার্যকালে সরকার এবং বিরোধী উভয়কেই সমানভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং বিচার বিভাগ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে চলেছিলেন। রমেশ বলেন, “এই মুহূর্তে জল্পনা করার সময় নয় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করব ধনখরকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে রাজি করাতে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি এবং তাকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আশা করি যে তিনি শ্রী জগদীপ ধনখরকে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে রাজি করাবেন। এটি দেশের স্বার্থে হবে এবং বিশেষ করে কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তি নিয়ে আসবে।”

Vice President Election : জগদীপ ধনখরের পদত্যাগে প্রয়োজন হয়ে উঠল উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন – সাংবিধানিক পদ্ধতির বিবরণ ।

আগের ঘটনা ও পটভূমি:

ধনখর, ৭৪ বছর বয়সী, ২০২২ সালের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং তার মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত ছিল। সম্প্রতি দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS) এ তার এনজিওপ্লাস্টি হয়েছিল। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে তার কার্যকালে বিরোধীদের সাথে তার বেশ কয়েকবার সংঘাত হয়েছিল, এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবও আনা হয়েছিল, যা রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ বাতিল করেছিলেন। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য এটিই ছিল প্রথম প্রস্তাব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদত্যাগ সরকারের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত ধাক্কা এবং আগামী দিনে এর রাজনৈতিক প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর