ব্যুরো নিউজ ২১ জুলাই ২০২৫ : শুক্রবার দুর্গাপুরে এক জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে নারী নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। আরজি কর কাণ্ড এবং কসবা ল’কলেজে গণধর্ষণ কাণ্ডকে সামনে রেখে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলার মেয়েরা তৃণমূল সরকারের অধীনে সুরক্ষিত নন এবং তৃণমূল সরকার অপরাধীদের আড়াল করছে। প্রধানমন্ত্রী এদিন ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন।
“হাসপাতালেও মা-বোনেরা সুরক্ষিত নয়”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মা-মাটি-মানুষের সরকার বাংলার মা-বোনের সঙ্গে যা করছে তা বলার নয়। পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতালেও মেয়ে-বোনরা সুরক্ষিত নয়।” তিনি ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জন্মদিনের প্রসঙ্গ টেনে আক্ষেপ করেন যে, সেই বাংলায় আজ হাসপাতালেও চিকিৎসকেরাও সুরক্ষিত নন। আরজি কর কাণ্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপরাধীদের আড়াল করার অভিযোগ তোলেন তিনি। এর রেশ কাটতে না কাটতেই কসবা ল’কলেজে ঘটে যাওয়া আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানেও মূল অভিযুক্তর সঙ্গে তৃণমূলেরই যোগসূত্র বেরিয়ে এসেছে। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের বড় নেতা-মন্ত্রীরা নিপীড়িতাকেই দোষী বলে দাবি করে। এমন অনেক উদাহরণ আছে যা তৃণমূলের নির্মমতার পরিচয় দেয়। বাংলাকে এখান থেকে মুক্তি দিতে হবে।”
BJP : তৃণমূলের শহীদ দিবসের কর্মসূচীর মান নিয়ে কটাক্ষ , গোটা বঙ্গে বিজেপির কর্মসূচী !
শিল্প, কর্মসংস্থান ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়েও সরব মোদী
শুধু নারী সুরক্ষা নয়, প্রধানমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ দাঙ্গা, বাংলায় চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং শিল্প ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়েও তৃণমূল সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, চাকরির জন্য বাংলার হাজার হাজার যুবক-যুবতী রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সিন্ডিকেট রাজ ও তোলাবাজির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি অভিযোগ করেন, এগুলি রাজ্যের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় যখন ছোটখাটো বিষয়েও দাঙ্গা হয়, হিংসা হয়, আর পুলিশ একতরফা পদক্ষেপ নেয়, সেখানে কেউ কীভাবে বিনিয়োগ করবে? যেখানে ন্যায়ের আশাটুকু নেই, সেখানে বিনিয়োগ আসবে কী করে?”
শ্যামাপ্রসাদ ও বিধানচন্দ্র রায়ের ঐতিহ্য প্রসঙ্গ
দুর্গাপুরের মাটিকে ‘অনুপ্রেরণায় ভরা’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, এখান থেকেই দেশের প্রথম শিল্প মন্ত্রী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় উঠে এসেছিলেন, যিনি ভারতকে প্রথম শিল্প নীতি দিয়েছিলেন। তিনি বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মানুষের কথা বলেন, যিনি দুর্গাপুরকে একটি বড় স্বপ্ন ও পরিকল্পনার লক্ষ্যে বেছে নিয়েছিলেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, “যিনি তখনকার গোলামির আমলেও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। অথচ আজকের বাংলায় সেই ঐতিহ্য কোথায়?”
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “আজকের পশ্চিমবঙ্গের নতুন প্রজন্মকে ছোট ছোট চাকরির জন্যও অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে। দুর্গাপুর, বর্ধমান, আসানসোল—এককালে এই অঞ্চলের হাত ধরেই ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়েছিল। অথচ আজ এখানে নতুন শিল্প তো আসছেই না, বরং যা আছে তাতেও তালা পড়ে যাচ্ছে।”
TMC : শহীদ দিবসের সমাবেশে ভিড় বাড়াতে কি পরীক্ষার দিনবদল? পুরুলিয়ায় তীব্র বিতর্ক
‘তৃণমূল গেলেই আসবে আসল পরিবর্তন’
মোদী বলেন, “বাংলাকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে হবে। আজ যেসব প্রকল্প দুর্গাপুর থেকে চালু করা হল, তা তারই প্রতীক।” তিনি ২১ শতকের প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাংলার শিল্পেরও সেই প্রযুক্তি দরকার। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলা দেশের শিল্পের কেন্দ্রে পরিণত হবে, কারণ এখানে পরিশ্রমী কর্মীর অভাব নেই।
তাঁর অভিযোগ, “বাংলায় উন্নয়নের সামনে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তৃণমূল সরকার। দিন বদলালে, তৃণমূল গেলে তবেই আসল পরিবর্তন আসবে। সেই দিন বাংলার বিকাশের নতুন গতি শুরু হবে।” তিনি উপসংহারে বলেন, “এই রাজ্য সরকার মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে না। দোকানপাটের সুরক্ষা দিতে পারে না। নতুন প্রজন্মের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু যতদিন তৃণমূল সরকার থাকবে, ততদিন তা হবে না।”