Rafale Xguard Phantom

শুদ্ধাত্মা মুখার্জি , ১৩ জুলাই ২০২৫ :  গত ৭ মে, ২০২৫ তারিখে ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) জম্মু ও কাশ্মীর-এর পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর মাধ্যমে একটি চার দিনের বিমান অভিযান শুরু করে। ভারতীয় যুদ্ধ বিমানগুলো পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এর সন্ত্রাসী শিবিরগুলোতে নির্ভুল নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানলেও, ইসলামাবাদে এর ভিন্ন চিত্র প্রকাশিত হয়। অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তান এই দাবি ছড়াতে থাকে যে, চীনের তৈরি J-10 যুদ্ধবিমান এবং চীনা PL-15 ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমণের মুখে ভারত তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। তবে সেই মিথ্যাচার এইবার ফাঁস হয়ে গেছে – রাফাল বিমানের একটি বিশেষ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে , নাম  ‘এক্স গার্ড ‘ ।

‘এক্স-গার্ড’ কী?

সম্প্রতি জেনস ডিফেন্স উইকলি (Jane’s Defence Weekly)-র এক তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে যে, রাফাল গুলি করে নামানোর পাকিস্তানের একাধিক দাবি আসলে ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানার ওপর ভিত্তি করে ছিল – তারা বাস্তব বিমান নয়, বরং বিমানবাহী অনুকরণ যন্ত্র (towed decoys)-কে আঘাত করেছিল। এই প্রতারণা সম্ভব হয়েছিল ভারতের রাফাল জেটে থাকা একটি স্বল্প-পরিচিত কিন্তু যুগান্তকারী প্রযুক্তি ‘এক্স-গার্ড’ (X-Guard)-এর মাধ্যমে। এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত কাঠামো যা একটি আসল জেটের সমস্ত সনাক্তযোগ্য বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করে। আসলে যা আঘাত করা হয়েছিল, তা ছিল ৩০ কেজি ওজনের একটি টয়েড ডেকয় সিস্টেম যা ভারতীয় রাফাল জেটগুলোর পেছনে অদৃশ্যভাবে ঝুলছিল।
‘এক্স-গার্ড’ রাফালের SPECTRA ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট-এর একটি অংশ, যা ক্ষেপণাস্ত্র ফাঁকি এবং রাডার প্রতারণার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। রাফাল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস দ্বারা নির্মিত এই হালকা, এআই-চালিত যন্ত্রটি একটি ১০০ মিটার ফাইবার-অপটিক তারের মাধ্যমে বিমান থেকে মোতায়েন করা হয়। সিস্টেমটি একটি ৫০০ ওয়াটের ৩৬০-ডিগ্রি জ্যামিং সিগন্যাল নির্গত করে যা কেবল রাফালের রাডার প্রোফাইল অনুকরণ করে না, বরং একটি চলমান জেটের ডপলার শিফটও চয়ন করে। সংক্ষেপে, একটি শত্রু রাডার বা হিট-সিকিং ক্ষেপণাস্ত্রের কাছে, ‘এক্স-গার্ড’ ঠিক একটি আসল যুদ্ধবিমানের মতোই দেখতে এবং আচরণ করে। এটি দুই সেকেন্ডেরও কম সময়ে মোতায়েন করা যায়, পুনরায় ব্যবহারের জন্য পুনরুদ্ধার করা যায় এবং রাডার লক ও ক্ষেপণাস্ত্র উভয়কেই বিভ্রান্ত করতে প্রতি মুহূর্তে সামঞ্জস্য তৈরি করা যায়। এটি ককপিটের সাথে প্রত্যেক মুহূর্তের যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম, পাইলটদের ডেকয়ের স্থিতি, ক্ষেপণাস্ত্র লক এবং রাডার এনগেজমেন্ট সম্পর্কে আপডেট প্রদান করে, যা ইলেকট্রনিক জ্যামিং থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে।

Operation Sindoor : অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের নৌবাহিনী নিরুদ্দেশ কেন ?

‘ডেকয় উইংম্যান’ হিসেবে এক্স-গার্ড

জেনস ডিফেন্স উইকলি অনুসারে, পাকিস্তানের J-10C ফাইটার, যা KLJ-7A AESA রাডার এবং চীনা-সরবরাহকৃত PL-15E ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত ছিল, সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। তারা রাডার লক এবং ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত নিবন্ধন করেছিল, কিন্তু বিমানের উপর নয়, অনুকরণ কাঠামোর উপর।
মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রাক্তন পাইলট রায়ান বোডেনহেইমার, যিনি F-15E এবং F-16 উভয়ই উড়িয়েছেন, IAF-এর ‘এক্স-গার্ড’ ব্যবহারের ঘটনাটিকে প্রতারণার একটি পাঠ্যপুস্তক উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি আমরা দেখা সেরা স্পুফিং এবং প্রতারণা। PL-15E স্পুফিংকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। পাকিস্তান ফ্যান্টমগুলিতে ( ভূতেদের লক্ষ করে )  গুলি চালিয়েছিল এবং ভেবেছিল তারা সফল হয়েছে।”
‘এক্স-গার্ড’কে কিছু বিশেষজ্ঞ একটি “ডেকয় উইংম্যান” হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা রাডারের মনোযোগ আকর্ষণ করে, ক্ষেপণাস্ত্রের ফায়ার আমন্ত্রণ জানায় এবং শত্রু পাইলটদের বিভ্রান্ত করে, যখন আসল রাফালগুলো নিরাপদে এলাকা ত্যাগ করে।

পাকিস্তানের অপপ্রচার ও চীনের মদদ

ভারতের এই আকাশ অভিযানের পর থেকে পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে এই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে যে, চীন থেকে সরবরাহকৃত J-10 এবং PL-15 ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবিলায় ভারতের তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। এই মিথ্যা বয়ানকে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা, বিশেষ করে টিকটক ব্যবহারকারীরা, আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানি ও চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই মিথ্যা দাবির বাইরে গিয়েও ভুয়া খবর ছড়িয়ে ভারত-ফ্রান্সের কৌশলগত অংশীদারিত্বে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছে। তারা দাবি করে যে, ভারতের এখন ফরাসি অ্যারোস্পেস কোম্পানি দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে গুরুতর বিরোধ চলছে। এই ভুল তথ্য প্রচারের ভিত্তি ছিল মিশরের একটি কিউনিউজ (Qnews) মিডিয়া পোস্ট।
তবে, এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং কিউনিউজ মিডিয়া আউটলেটের পরিচয় চুরি করে এই কাজটি করা হয়েছিল। যখন কিউনিউজের সাথে যোগাযোগ করা হয়, তখন তারা জানায় যে শেয়ার করা পোস্টটি “সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক ” এবং নিশ্চিত করে যে এটি তাদের “কোনো অফিসিয়াল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়নি”।
উল্লেখ্য, সাধারণত রাফাল F3R বিমান, যা ভারত ব্যবহার করে, তা ফ্রান্স দ্বারা পঞ্চম প্রজন্মের F-35-এর সমান ক্ষমতার বলে মানা হয়। সেক্ষেত্রে এই রাফাল যুদ্ধবিমানটি চীনের J-20 পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের তুলনায় আধুনিক। ফ্রান্স রাফালের একটি পঞ্চম প্রজন্মের সংস্করণ রাফাল F5 তৈরি করতে চলেছে যা ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের অভাব পূরণ করবে। ফ্রান্স NATO সদস্য হয়েও অন্যান্য সদস্যদের মতো F-35 বা F-16 ব্যবহার করে না – ফ্রান্স সরাসরি তাদের রাফালের বিভিন্ন সংস্করণ ব্যবহার করে থাকে, যা ৪.৫ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ইউরোফাইটার টাইফুন, F-16 এবং F-35-এর পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে। এটি উল্লেখযোগ্য কারণ ফ্রান্স শুধু NATO-র অনন্য সদস্য নয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা কক্ষের স্থায়ী সদস্যও বটে।

ভারতের পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান

ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব আর কে সিং, সিএনবিসি-টিভি১৮-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের দাবিগুলোকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনারা ‘রাফাল’ শব্দটি বহুবচনে ব্যবহার করেছেন। এটি তথ্যগতভাবে ভুল। পাকিস্তান একটিও রাফাল গুলি করে নামাতে পারেনি।”
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানও যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির দাবি খারিজ করে বলেছেন যে ভারতের বাহিনী “শত্রু বিমান প্রতিরক্ষা ভেদ করেছে নির্ভয়ে” এবং “নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম না করেই সমস্ত উদ্দেশ্য সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।”

অপারেশন সিঁদুরে ৮ F-16, ৪ JF-17 ভূপাতিত; বিপুল ক্ষতি পাক বিমান বাহিনীর

অপারেশন সিঁদুরের অভ্যন্তরীণ চিত্র: আসলে কী ঘটেছিল?

৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত পরিচালিত ‘অপারেশন সিন্দুর’ রাফাল, মিরাজ ২০০০ এবং সু-৩০ এমকেআই বিমানের সমন্বিত হামলা দেখেছিল, যেখানে SCALP ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং Spice-2000 বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। এই অভিযানটি ছিল পাহালগাম হামলার বিরুদ্ধে ভারতের একটি সুচিন্তিত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ, এবং এটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় জেট বিমানগুলো পাকিস্তানি আকাশসীমা লঙ্ঘন না করেই সম্পাদিত হয়েছিল, যা সংঘাত এড়ানোর একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ ছিল। তা সত্ত্বেও, এই হামলার নির্ভুলতা, অস্ত্রের পাল্লা এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (EW) কৌশলগুলির কার্যকারিতা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে হতবাক করে দেয়।

এই ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানে পাকিস্তানের বেশ কিছু যুদ্ধবিমান, যুদ্ধ পরিস্থিতি জানানোর বিমান AWACS, কৌশলগত পারমাণবিক কমান্ড সেন্টার এবং সংরক্ষিত পারমাণবিক বোমার রসদ তথা রসদাগার নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। বহু সন্ত্রাসী সদর দফতর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছিল জঙ্গি সমেত । ইদানীং পাকিস্তান তাদের সামরিক পরিকাঠামোর তুলনায় তাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে দ্রুত পূর্বের ন্যায় গড়ে তুলছে। বলাই বাহুল্য, পাকিস্তান তাদের সন্ত্রাসবাদী পরিকল্পনা বহাল রাখবে।

ভবিষ্যতের বিমান যুদ্ধের জন্য এর অর্থ কী?

ভারতের ‘এক্স-গার্ড’ প্রযুক্তির কৌশলগত মোতায়েন কেবল পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা দুর্বলতাগুলোকেই উন্মোচন করেনি, বরং বিশ্বের কাছে আকাশ যুদ্ধের ভবিষ্যতের একটি পূর্বাভাসও দিয়েছে। এখন কেবল আক্রমণাত্মক কৌশল নয়, ইলেকট্রনিক প্রতারণা, এআই-চালিত সিস্টেম এবং কগনিটিভ ওয়ারফেয়ার বিমান শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর