ব্যুরো নিউজ ২৩ জুলাই ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের মধ্যে, বিশেষত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে NRC চালু করার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে, আজ কলকাতা হাইকোর্টে NRC এর পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়নের দাবিতে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
আদালতে PIL দায়ের ও নির্দেশনা:
বিচারপতি সুজয় পল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-এর ডিভিশন বেঞ্চে এই জনস্বার্থ মামলাটি জমা দেওয়া হয়েছে, এবং বেঞ্চ আবেদনটি দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে। আদালত রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে পূর্বে কোনো অনুরূপ আবেদন দায়ের করা হয়েছিল কিনা, সে সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশও দিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার মুখে PIL:
এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যখন তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যে NRC চালু করার গোপন প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছে। দলটি এই ধরনের যেকোনো পদক্ষেপকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে, এটিকে ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে NRC কার্যকর করার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, ঘোষণা করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গ পরোক্ষ উপায়ে কেন্দ্রের NRC বাস্তবায়নের কোনো প্রচেষ্টা সহ্য করবে না। তিনি আরও বলেছেন যে তাঁর প্রশাসন এটিকে “ভয়ঙ্কর চক্রান্ত” বলে অভিহিত করে সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করবে। কোচবিহারের একজন ৫০ বছর বয়সী বাসিন্দার ঘটনা, যিনি আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে NRC নোটিশ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ, এরপর তাঁর অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনাটির সমালোচনা করে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন যে, কেন্দ্র ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে বাংলায় NRC চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নাগরিকত্ব এবং অভিবাসনের জটিলতা:
একটি জাতির নাগরিকত্বের অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য NRC বাস্তবায়ন একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে, ভারতীয় উপমহাদেশে বিপুল সংখ্যক অবৈধ বা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে আসা অভিবাসীদের উপস্থিতির কারণে নাগরিকত্ব নিবন্ধন সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে, CAA (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) এর বিধানগুলি ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের বৈধ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়। তবে, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য এই ধরনের আবেদন করার সুযোগ কম এবং তারা আইন মেনে চলতে অক্ষম। এই জটিল পরিস্থিতিই পশ্চিমবঙ্গে NRC নিয়ে বিতর্ককে আরও গভীর করে তুলেছে।