ব্যুরো নিউজ ২৩ জুলাই ২০২৫ : আগ্রার চাঞ্চল্যকর ধর্মীয় ধর্মান্তরকরণ মামলায় মূল অভিযুক্ত আব্দুল রেহমানকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করেছে আগ্রা পুলিশ। রোহতক থেকে নিখোঁজ দুই বোনের তদন্ত করতে গিয়ে সাইবার পুলিশ স্টেশনের দল এই গ্রেফতারি সম্পন্ন করে। এই গ্রেফতারি উত্তর ভারতে সক্রিয় ধর্মীয় ধর্মান্তরকরণ চক্রগুলির কার্যপ্রণালী এবং বিস্তারের উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।
আব্দুল রেহমানের গ্রেফতার ও চাঞ্চল্যকর তথ্য:
রেহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ রোহতক, হরিয়ানায় নভেম্বর মাস থেকে নিখোঁজ থাকা একটি মেয়েকে উদ্ধার করে। মেয়েটির অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। রোহতক পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে এবং তারা মেয়েটিকে নিজেদের হেফাজতে নেবে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, রেহমান ‘অপারেশন উম্মত’ নামে একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং সুসংগঠিত ধর্মান্তরকরণ চক্রের বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৩৫ বছর ধরে আব্দুল রেহমান দিল্লি থেকে এই ধর্মান্তরকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। “উম্মত” একটি আরবি শব্দ যার অর্থ “একতাবদ্ধ সম্প্রদায়”, যা রেহমান কথিতভাবে মানুষকে তার দলে টানতে ব্যবহার করতেন।
Yogi Adityanath : ধর্মান্তর ও সন্ত্রাসের লিপ্ত ছাঙ্গুর বাবার বিলাসবহুল বাড়ি ভেঙে দিল ইউপি প্রশাসন
‘স্লিপার সেল’ কৌশল ও পদ্ধতি:
জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল রেহমান স্বীকার করেছেন যে তিনি ‘স্লিপার সেল’-এর মতো কাজ করতেন, অর্থাৎ গোপনে কাজ করতেন। গত ৩৫ বছর ধরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে আসছেন।
রেহমান জানান, তিনি প্রথমে তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করতেন এবং তারপর তার দলের মুসলিম যুবকদের তাদের কাছে পাঠিয়ে মগজধোলাই করতেন। একবার এই যুবকরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে, তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হত, মসজিদে নিয়ে গিয়ে তাদের কলমা পাঠ করানো হত এবং ধর্মান্তরিত মুসলিমদের সাথে বিবাহ দেওয়া হত, যা একটি পরিকল্পিত ধর্মান্তরকরণ প্রক্রিয়ার অংশ। রেহমান স্বীকার করেছেন যে তিনি একা কাজ করছিলেন না; একটি পূর্ণ দল এই সিন্ডিকেটে জড়িত ছিল, যা বিভিন্ন অঞ্চলে গোপনে কাজ করছিল।
জব্দ হওয়া সামগ্রী ও সংযোগ:
রেহমানের বাড়ি থেকে মাওলানা কালিম সিদ্দিকীর লেখা বেশ কিছু বই এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে, যা বর্তমানে তদন্তাধীন। এই বইগুলির মধ্যে রয়েছে ‘মাওলানা মোহাম্মদ: আপকি আমানত আপকি সেবা মে’, ‘ধর্ম পরিবর্তন’, ‘ইসলাম অউর আতঙ্কবাদ’ (ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ), ‘রিটার্নিং ইওর ট্রাস্ট’ এবং ‘ঈশ্বর অউর সৃষ্টি: শ্রেষ্ঠ কৌন’ (ঈশ্বর ও সৃষ্টি – কে শ্রেষ্ঠ?)। ‘ধর্ম পরিবর্তন’ নামক বইটির বিস্তারিত ভেতরের পৃষ্ঠাগুলিও জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা সাহিত্যে কীভাবে ধর্মীয় ধর্মান্তরকরণ চালানো যায় সে সম্পর্কিত বিষয়বস্তু রয়েছে বলে জানা গেছে।
আগ্রার পুলিশ কমিশনার দীপক কুমার গ্রেফতার এবং উদ্ধারকৃত সামগ্রী নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আব্দুল রেহমান, যিনি “রেহমান চাচা” নামেও পরিচিত, কালিম সিদ্দিকীর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আয়েশা তার জিজ্ঞাসাবাদেও রেহমানের নাম উল্লেখ করেছিলেন।
শান্তি ফাউন্ডেশন ও আন্তর্জাতিক সংযোগের ইঙ্গিত:
কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে যে রেহমান ‘পিস ফাউন্ডেশন’ (Peace Foundation) নামক একটি সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন, যা তিনি দিল্লিতে পরিচালনা করতেন। তার গুরু কালিম সিদ্দিকীকে এর আগে উত্তর প্রদেশ এটিএস (ATS) দিল্লি’র শাহীন বাগের একটি বড় আকারের ধর্মান্তরকরণ চক্র পরিচালনার অভিযোগে ২০২১ সালে গ্রেফতার করে এবং ২০২৪ সালে দোষী সাব্যস্ত করে। সিদ্দিকীর গ্রেফতার ও কারাবাসের পর রেহমান দায়িত্ব নিয়ে ‘অপারেশন উম্মত’ শুরু করেন বলে জানা গেছে।
যদিও সরাসরি আন্তর্জাতিক অর্থায়নের কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে ‘অপারেশন উম্মত’ এর দীর্ঘস্থায়ী কার্যকাল (৩৫ বছর) এবং বহু-রাজ্য জুড়ে এর বিস্তার একটি সুসংগঠিত এবং সম্ভবত বৃহৎ নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেয়, যা প্রায়শই এই ধরনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংযোগের সম্ভাবনা বাড়ায়।
Uttar Pradesh : তুকতাক ঝাড়ফুঁকের জেরে পীর বাবার বিপুল সম্পত্তি , রয়েছে পাকিস্তানি যোগ ! হদিস পেল ইডি
অপহরণ, ব্ল্যাকমেইল ও অন্যান্য অপরাধ:
রোহতকের নিখোঁজ হিন্দু তরুণীকে রেহমানের বাড়িতে পাওয়া যাওয়ায় অপহরণের বিষয়টি স্পষ্ট। এই ধরনের ধর্মান্তরকরণ চক্রে প্রায়শই অপহৃতদের ব্ল্যাকমেইল করা, তাদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ ওঠে। বর্তমান তদন্তেও এই ধরনের অপরাধের দিকগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তের প্রসার:
বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তদন্ত করছে যে সিদ্দিকীর কতজন সহযোগী এখনও জেলের বাইরে সক্রিয় রয়েছে এবং ধর্মান্তরকরণ চক্র চালিয়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে এবং অপারেশনের পূর্ণ মাত্রা উন্মোচন করতে তদন্ত চলছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, রেহমানের বিরুদ্ধে বিএনএস (BNS) ধারা ৮৭ (অপহরণ) এবং ১১১ (সংগঠিত অপরাধ) এর পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ বেআইনি ধর্মীয় ধর্মান্তরকরণ আইন, ২০২১ এর প্রাসঙ্গিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আগ্রার সদর বাজার থানায় তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়েছিল।