ব্যুরো নিউজ ১৭ জুলাই ২০২৫ : নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)-এর মহাসচিব মার্ক রুটে সম্প্রতি ভারত, চীন এবং ব্রাজিলকে এক “কড়া” বার্তা দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা যদি এই দেশগুলো না থামায়, তাহলে নাকি তাদের উপর “১০০ শতাংশ” দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসবে। বাহ! বিশ্বের তেলের বাজার এখন যেন ন্যাটোর “নীতি পুলিশ”-এর হাতে! আর এই হুমকি এসেছে ঠিক তখনই, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য নতুন অস্ত্র প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এবং ৫০ দিনের মধ্যে শান্তি চুক্তি না হলে রুশ রফতানি ক্রেতাদের উপর “কামড় বসানো” ১০০% শুল্কের হুমকি দিয়েছেন।
ন্যাটো প্রধানের “জ্ঞানের কথা”
মার্ক রুটে মহা জ্ঞানী ভঙ্গিতে বলেছেন, “আমি এই তিনটি দেশকে বিশেষ করে উৎসাহিত করব, যদি আপনি এখন বেইজিং বা দিল্লিতে থাকেন, অথবা আপনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে আপনি এই বিষয়টি একবার দেখতে চাইতে পারেন, কারণ এটি আপনাকে খুব কঠিনভাবে আঘাত করতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেছেন, “সুতরাং অনুগ্রহ করে ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে বলুন যে তাকে শান্তি আলোচনায় গুরুত্ব দিতে হবে, অন্যথায় এটি ব্রাজিল, ভারত এবং চীনের উপর মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে।” বোঝো ঠেলা! যেন ফোন করে পুতিনকে বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে! আর এই “আঘাত”টা আসলে কার জন্য, সেটা নিয়ে মনে হয় একটু চিন্তাভাবনা করা দরকার।
ভারতের “উচিত জবাব” এবং জ্বালানি সুরক্ষার প্রশ্ন
এদিকে, ভারত ন্যাটোর এই “বড়ভাইসুলভ” মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত তার মূল স্বার্থ, বিশেষ করে জ্বালানি নিরাপত্তায় কোনো আপস করবে না। তিনি বলেছেন, “আমরা এই বিষয়ে প্রতিবেদন দেখেছি এবং ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাকে পুনরাবৃত্তি করতে দিন যে, আমাদের জনগণের জ্বালানি চাহিদা সুরক্ষিত করা আমাদের জন্য একটি প্রধান অগ্রাধিকার। এই প্রচেষ্টায়, আমরা বাজারে যা উপলব্ধ এবং বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্বারা পরিচালিত হই।” এরপরই তিনি ন্যাটোর “দ্বৈত মানদণ্ড” নিয়ে সূক্ষ্ম অথচ কড়া ইঙ্গিত দিয়েছেন।
Defence : ভারতীয় নৌসেনার নব রণতরী আইএনএস তমালের উদ্বোধন হল রাশিয়ায় ! জানুন বিশেষত্ব
“দ্বৈত মানদণ্ড” – যখন ন্যাটো “তেল” দেখে তেলতেলে হয়!
ন্যাটো প্রধানের সতর্কবার্তার জবাবে জয়সওয়ালের “দ্বৈত মানদণ্ড” নিয়ে সতর্কবাণী সত্যিই চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি বলেন, “এই প্রচেষ্টায়, আমরা বাজারে যা উপলব্ধ এবং বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্বারা পরিচালিত হই। আমরা এই বিষয়ে কোনো দ্বৈত মানদণ্ড সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করব।” এর অর্থ পরিষ্কার – ভারত নিজের সার্বভৌম বাণিজ্য সিদ্ধান্তে কোনো বাইরের চাপের কাছে মাথা নত করবে না। কারণ, যখন ইউরোপের কিছু দেশও রাশিয়ার তেল বা গ্যাস কিনছে, তখন শুধু ভারত, চীন বা ব্রাজিলকে কেন “নীতিগত” হওয়ার পাঠ শেখানো হচ্ছে? যখন তেল সস্তায় পাওয়া যায়, তখন “গণতন্ত্র” আর “মানবাধিকার”-এর বুলি শিথিল হয়ে যায়, তাই না? যেন যুদ্ধটা শুধুই গরিব দেশের জন্য, আর তেল তো “আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব”-এর প্রতীক!
উপসংহার
ন্যাটোর এই “ভণ্ডামির পাঠ” বিশ্বের ভূ-রাজনীতির এক হাস্যকর দিক তুলে ধরেছে। এক হাতে “শান্তির বুলি” আর অন্য হাতে “নিষেধাজ্ঞার হুমকি” – এই বুঝি পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতি! বিশ্ব এখন ন্যাটোর “তেল-নীতি” দেখছে আর মুচকি হাসছে। কারণ, কে না জানে, বিশ্ব রাজনীতিতে “নীতি”র চেয়ে “তেল” অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ!