ব্যুরো নিউজ,২১ ফেব্রুয়ারি :আজ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এটি শুধু বাঙালি জাতির জন্যই নয়, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বাংলাভাষার শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন এটি, যাঁদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা আজও আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারি। ‘অমর একুশে’ আমাদের জন্য এক অনন্য গৌরবের দিন, এই দিনটি রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের স্মৃতি হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা যে রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, তা আজও আমাদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব রেখে যায়।
মহাকুম্ভের বাণিজ্যিক বিস্তারঃ ৩ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসার নতুন নজির
দিনটির ইতিহাস
ভাষা আন্দোলনের সেই দিনটির ইতিহাস আমরা ভুলতে পারি না। ইতিহাসে পাঁচজন শহিদের নাম বিশেষভাবে পরিচিত, যাঁরা ওই দিন শহিদ হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং শফিউর। এই পাঁচজনের মধ্যে বরকত এবং জব্বার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সালাম ছিলেন একজন রিকশাচালক, শফিউর ছিলেন হাইকোর্টের কর্মচারী এবং রফিক ছিলেন এক বিখ্যাত প্রিন্টিং প্রেসের মালিকের ছেলে। যদিও আরও অনেক শহিদ হয়েছিল ২১ ফেব্রুয়ারি, তারা ইতিহাসে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি।তবে বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় যে, ভাষা আন্দোলনে শহিদের সংখ্যা ছিল প্রায় চল্লিশ। ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে ১৯৫১ সালের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যেখানে মোট ৩৯ জন শহীদের নাম উল্লেখ করা হয়।
সেই গ্রন্থের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শহীদদের লাশ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সেখানে একটি ‘গায়েবি জানাজা’ পড়া হয়। আন্দোলনের পর, ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ মৃতদেহগুলো নিয়ে গিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।ভাষা আন্দোলনের সময় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর, শহীদদের প্রতি তাদের আচরণ ছিল অমানবিক। ২১ ফেব্রুয়ারি, বিশেষত, ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছিল। সে সময়ের অনেক সংবাদপত্র এবং রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, এই আন্দোলনে শহীদদের সংখ্যা ছিল চল্লিশের কাছাকাছি।
কলকাতায় এক দিনের ঝড়বৃষ্টিতে পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমলঃ আগামী কয়েকদিন বৃষ্টির সতর্কতা আছে? জানুন
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ভাষা আন্দোলনের সংগঠকরা জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে নিহতদের দেহ গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং এর ফলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পায়।আজকের এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ভাষার জন্য কত মূল্যবান রক্তাক্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই ভাষা আন্দোলন ছিল শুধুমাত্র ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং এটি ছিল আমাদের জাতিগত আত্মসম্মান এবং ভাষাগত স্বাধীনতার এক মহান সংগ্রাম। শহীদদের ত্যাগ কখনও ভুলে যাওয়া যাবে না। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি, গর্ব অনুভব করি।