ব্যুরো নিউজ ৭ আগস্ট ২০২৫ : আমেরিকার বৈষম্যমূলক শুল্ক নীতি এবং ভারতের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক পদক্ষেপ , যা শত্রুরাষ্ট্রদের বাণিজ্যিক সুবিধার্থে ব্যাবহার হবে , তার প্রতিবাদে এবার সরব হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কলকাতার বিজয় দুর্গে (ফোর্ট উইলিয়াম) অবস্থিত ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল। অন্যদিকে, মার্কিন ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী উড়োজাহাজ P8I কেনার পরিকল্পনাও স্থগিত করে দিয়েছে নয়া দিল্লি ।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খোঁচা , ট্রাম্পের ‘ উক্রেন যুদ্ধের মুনাফা ‘ মন্তব্যে
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড তাদের অফিসিয়াল হ্যান্ডেলে ১৯৭১ সালের একটি পুরোনো সংবাদপত্রের ক্লিপিং শেয়ার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে খোঁচা দিয়েছে। এই পোস্টে দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছিল। ক্লিপিংটিতে তৎকালীন প্রতিরক্ষা উৎপাদন মন্ত্রী ভি.সি. শুক্লার মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন “নগণ্য মূল্যে” পাকিস্তানকে অস্ত্র বিক্রি করেছে।
এদিকে, ট্রাম্প পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক ২৯% থেকে কমিয়ে ১৯% করেছেন, যা থেকে ভারতের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক নীতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একই সাথে ভারতীয় সেনার এই মনে করানো প্রতিবেদন মার্কিন রাষ্ট্রপতির ‘ উক্রেন যুদ্ধের মুনাফা ভারত নিচ্ছে ‘ মন্তব্যের প্রতিবাদ বলে মনে করা হচ্ছে ।
Donald Trump : ভারতের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা , ৫০% বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের
মার্কিন শুল্কের মোকাবিলায় ভারতের সামরিক প্রত্যুত্তর: P-8I চুক্তি স্থগিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কড়া জবাব দিতে ভারতীয় নৌবাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ছয়টি বোয়িং P-8I মেরিটাইম পেট্রল বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। প্রায় $৩.৬ বিলিয়ন মূল্যের এই চুক্তিটি, যা আগেই মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপের মধ্যে ছিল, এখন কৌশলগত পুনর্বিবেচনার মুখে পড়েছে।
অজিত দোভালের রাশিয়া সফর ও বিকল্পের সন্ধান
এই সমস্ত ঘটনার মধ্যে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত দোভাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সফরে রাশিয়া গেছেন। এই সফরের মূল লক্ষ্য সামরিক ক্রয়ের জন্য বিকল্প একটি তালিকা তৈরি করা। P-8I এর পরিবর্তে কামভ Ka-31, F-35 এর পরিবর্তে Su-75 এমনকি যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের বিকল্প হিসেবে GE F404, F414 এর বদলে ইজদেলিয়ে প্রোডাক্ট ১৭৭-এর উন্নত সংস্করণ কেনার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফরের প্রধান লক্ষ্য হতে পারে Su-75 এবং S-500 এর যৌথ উৎপাদন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করা। তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি স্পষ্ট বার্তা যে, শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞা যাই হোক না কেন, ভারত মাথা নত করবে না এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় থাকবে।