India US Trade deal

ব্যুরো নিউজ ১৭ জুলাই ২০২৫ : ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার জন্য নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই আলোচনায় দুগ্ধ এবং কৃষি খাত সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে, যেখানে ভারত ডেয়ারি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট ‘রেড লাইন’ এঁকে দিয়েছে। যেখানে ওয়াশিংটন ডিসি ভারতের ডেয়ারি বাজার উন্মুক্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছে, ভারত সেখানে কঠোর সার্টিফিকেশনের উপর জোর দিচ্ছে যে আমদানিকৃত দুধ এমন গরু থেকে আসতে হবে যা মাংস বা রক্তের মতো প্রাণী-ভিত্তিক পণ্য খায়নি – যা গভীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার উপর নির্ভরশীল একটি শর্ত।

ডেয়ারি বিতর্ক: একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু

স্থগিত আলোচনার মূলে রয়েছে ভারতের এই দাবি যে, সমস্ত আমদানিকৃত ডেয়ারি পণ্যকে কঠোর পশুচিকিৎসা সার্টিফিকেশন মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এই মানদণ্ড অনুসারে, আমদানির জন্য দুধ উৎপাদনকারী গরুগুলিকে মাংস, রক্ত বা চর্বির মতো প্রাণী-উৎপন্ন পদার্থ খাওয়ানো যাবে না। ভারতের মূলত নিরামিষাশী জনসংখ্যা এবং ডেয়ারি পণ্যের সাথে যুক্ত ধর্মীয় পবিত্রতা, যা দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের একটি অপরিহার্য অংশ, এই দাবির মূল কারণ। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অজয় ​​শ্রীবাস্তব ব্যাখ্যা করেছেন, “কল্পনা করুন, একটি গরুর দুধ থেকে তৈরি মাখন খাচ্ছেন যা অন্য একটি গরুর মাংস এবং রক্ত খেয়েছিল। ভারত হয়তো কখনোই তা অনুমোদন করবে না।” এই উদ্বেগ কেবল অর্থনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং খাদ্যাভ্যাসের নীতিকে স্পর্শ করে।

মোদীর ট্রাম্পকে সাফ বার্তা ‘ যুদ্ধ বিরতিতে আপনার কোনও ভূমিকা নেই ‘

অর্থনৈতিক ঝুঁকি: কোটি কোটি কৃষকের সুরক্ষা

ভারতের ডেয়ারি খাত কেবল সাংস্কৃতিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভিত্তিও। দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম দুধ উৎপাদক, যা ৮০ মিলিয়নেরও বেশি ক্ষুদ্র কৃষককে সহায়তা করে এবং ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষকে খাবার সরবরাহ করে। সস্তা আমদানি পণ্যের জন্য ডেয়ারি খাত উন্মুক্ত করলে বাজার প্লাবিত হওয়ার এবং দেশীয় উৎপাদকদের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা সম্ভাব্যভাবে উল্লেখযোগ্য জীবিকা হারানোর কারণ হতে পারে।
একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, “ডেয়ারি নিয়ে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। এটি একটি রেড লাইন।” বর্তমানে পনিরের উপর ৩০%, মাখনের উপর ৪০% এবং গুঁড়ো দুধের উপর ৬০% উচ্চ শুল্ক বিদেশী প্রতিযোগিতা থেকে শিল্পকে রক্ষা করে, যা নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ থেকে আমদানিকে অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক করে তোলে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং বাণিজ্য বাধা অভিযোগ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গত বছর ৮.২২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিসহ একটি প্রধান বৈশ্বিক ডেয়ারি রপ্তানিকারক দেশ, ভারতের সার্টিফিকেশন প্রয়োজনীয়তাকে “অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্য বাধা” হিসাবে সমালোচনা করেছে এবং ভারতকে বৃহত্তর বাজার প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দেয় যে ভারতের পশুচিকিৎসা সার্টিফিকেশন নিয়ম এবং শুল্ক অন্যায়ভাবে বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ করে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-র মতো ফোরামে এগুলি চ্যালেঞ্জ করা হয়।

পশুর খাদ্য নিয়ে স্বাস্থ্য এবং নৈতিক উদ্বেগ

অর্থনীতির বাইরেও, মার্কিন ডেয়ারি শিল্পের গবাদি পশুর খাদ্য অভ্যাস ভারতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে মার্কিন গরুকে পশুর উপজাত পণ্য খাওয়ানো হতে পারে, যার মধ্যে শূকর, মাছ, মুরগি এবং এমনকি হাঁস-মুরগির বর্জ্যও থাকতে পারে – যা পালক এবং বিষ্ঠার মিশ্রণ এবং এটি কম খরচে খাদ্য সংযোজন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের অভ্যাস ভারতীয় খাদ্যাভ্যাস এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। ভারতের পশুসম্পদ বিভাগ কঠোরভাবে নির্দেশ দেয় যে আমদানিকৃত ডেয়ারি পণ্য অবশ্যই এমন প্রাণী থেকে উদ্ভূত হতে হবে যেগুলিকে গো-জাতীয় খাদ্য খাওয়ানো হয়নি। এই নীতি ভোক্তাদের সংবেদনশীলতা রক্ষা এবং ম্যাড কাউ রোগের মতো রোগ প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে।

জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ দমনে মোদি-ট্রাম্পের ভিন্ন কৌশল !

সামনের পথ: সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়া নাকি বিভেদ গভীর হওয়া?

ডেয়ারি খাতের এই বিরোধ ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনার অন্যতম কঠিন সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে, উভয় পক্ষই নড়তে রাজি নয়। ভারতের জন্য, তার ডেয়ারি কৃষকদের রক্ষা করা এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে সম্মান করা সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি লাভজনক এবং দ্রুত বর্ধনশীল বাজার হিসাবে যা দেখে, সেখানে আরও বেশি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে।
দুটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি যখন একটি বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির জন্য চেষ্টা করছে, তখন এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে “নন-ভেজিটেবল দুধ” বিতর্ক সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেই পর্যন্ত, ডেয়ারি আমদানি নিয়ে এই বিভেদ বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জটিল মিথস্ক্রিয়াকে তুলে ধরছে যা বৈশ্বিক আলোচনাকে আকার দিচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্যবসা আলোচনা এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ উভয় ক্ষেত্রেই শুল্ক আরোপের দ্বিমুখী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন, যা একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তিকে অসম্ভব করে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর