ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) বাংলাদেশে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং একে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে খর্বকারী এক উদ্বেগজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং রাজনৈতিক পরিসর কমে যাওয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশে দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দৃঢ় সমর্থক।”
বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, এবং ১৯৭১ সালে দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী এই দলটিকে, সোমবার সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে কয়েকদিন পর, যখন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যকলাপ, এর সহযোগী সংগঠনগুলো সহ, নিষিদ্ধ করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে যতক্ষণ না বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি-বিডি) দলের নেতাদের বিচার সম্পন্ন করে, যাঁদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০২৫ বাংলাদেশ সরকারকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত যেকোনো “সত্তা”কে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেয়, যা মূল ২০০৯ সালের সংস্করণ থেকে একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ, যেখানে শুধু ব্যক্তিদের নিষিদ্ধ করার অনুমতি ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে দেয়, যা কার্যত দলটিকে ভবিষ্যতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করে।
ভারতের এই প্রতিক্রিয়া এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি নিয়ে তার বৃহত্তর উদ্বেগ তুলে ধরে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিটি রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং বিরোধী কণ্ঠস্বরের পরিসর কমে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে, যা একটি কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য মৌলিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশ যখন তার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক সংকটময় পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে, তখন দ্রুত, অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য ভারতের আহ্বান এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতি তার আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতি আরও তুলে ধরে ভারতের সামনে থাকা কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্বার্থ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তার অঙ্গীকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় সম্মুখীন হতে হচ্ছে।