ব্যুরো নিউজ ২২ জুলাই ২০২৫ : দেশের অন্যতম নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খড়গপুর আইআইটি-তে এক সপ্তাহের মধ্যে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এর পাশাপাশি গ্রেটার নয়ডার শারদা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায়, সুপ্রিম কোর্ট সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। শীর্ষ আদালত দুই প্রতিষ্ঠানকেই তলব করেছে এবং জানতে চেয়েছে, পুলিশের কাছে সময় মতো তথ্য জানানো হয়েছিল কি না এবং এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল কি না।
খড়গপুর আইআইটি-তে পরপর ছাত্রমৃত্যু
প্রথম ঘটনা: ঋতম মণ্ডল কিছু দিন আগেই খড়গপুর আইআইটি-র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ২৫ বছর বয়সী ছাত্র ঋতম মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ তার হোস্টেল রুম থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুলাই, শুক্রবার রাতে রাজেন্দ্র প্রসাদ হলের ২০৩ নম্বর রুমে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তার বন্ধুরা। ঋতমের বন্ধুরা তাকে ডাকতে গিয়ে সাড়া না পাওয়ায় আইআইটি কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে খড়গপুর টাউন থানার অধীনস্থ হিজলি ফাঁড়ির পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঋতমের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঋতমের দেহ সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছিল। ঋতমের বাড়ি কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায়। এটি আত্মহত্যার ঘটনা নাকি এর পেছনে অন্য কিছু রয়েছে, তা জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।
Congress : ওড়িশায় ধর্ষণের অভিযোগে কংগ্রেস ছাত্রনেতা উদিত প্রধান গ্রেফতার, অস্বস্তিতে দল ।
দ্বিতীয় ঘটনা: চন্দ্রদীপ পাওয়ার সোমবার রাতে খড়গপুর আইআইটি-তে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র চন্দ্রদীপ পাওয়ারের (মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা) মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শ্বাসনালীতে ওষুধ আটকে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ এবং আইআইটি সূত্রে খবর, চন্দ্রদীপ নেহরু হলের ডি-৪০৮ রুমে থাকতেন এবং বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলেন। রাতে খাওয়ার পর চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ খাওয়ার সময় গলায় ওষুধ আটকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রুত তাকে আইআইটি খড়গপুরের বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সিপিআর (CPR) দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তার মৃত্যু হয়। আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ মৃত ছাত্রের পরিবারকে খবর দিয়েছে।
শারদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা এবং সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
শারদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা: গত শনিবার রাতে গ্রেটার নয়ডার শারদা বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্লস হোস্টেলে দ্বিতীয় বর্ষের বিডিএস (BDS) ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে নলেজ পার্ক কোতোয়ালি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ছাত্রীর রুম থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। নোটটিতে মেয়েটি তার ডেন্টাল বিভাগের এক মহিলা ও এক পুরুষ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ করেছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে হোস্টেল চত্বরে বিক্ষোভ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
DY Chandrachud : প্রাক্তন বিচারপতির সরকারি আবাসন ছাড়তে দেরি, সরব সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ: শারদা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইআইটি খড়গপুরের ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমলে নিয়েছে। শীর্ষ আদালত উভয় প্রতিষ্ঠানকেই তলব করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে যে, পুলিশকে সময় মতো এই বিষয়গুলি জানানো হয়েছিল কি না। আদালত মনে করছে এই ঘটনাগুলিতে ‘কিছু ভুল’ ছিল। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানতে চেয়েছে যে, দুটি ঘটনাতেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল কি না, এবং কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
বিষয়টিতে সহায়তার জন্য এবং একটি বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপনের জন্য আদালত সিনিয়র অ্যাডভোকেট অপর্ণা ভাটকে অ্যামিকাস কিউরি (amicus curiae) হিসেবে নিয়োগ করেছে।
পরপর ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপের পর আশা করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলির গভীরে গিয়ে তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।