ব্যুরো নিউজ, ২১ জানুয়ারি :মহাদেশ আফ্রিকা, যা নানা রহস্যে পূর্ণ, এখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট দেশ এবং আদিম জনগোষ্ঠী, যাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি আধুনিক সমাজের থেকে অনেকটাই আলাদা। এদের মধ্যে একটি বিশেষ উপজাতি হলো ‘হিম্বা’, যারা বাস করে নামিবিয়াতে। হিম্বা জনগণকে বিশ্বের শেষ আধা-যাযাবর উপজাতি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের জীবনযাত্রা, সমাজ ব্যবস্থা, এবং সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। আধুনিক সমাজে যেসব বিষয়কে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, সেগুলিই হিম্বাদের কাছে একেবারে স্বাভাবিক। তাদের মধ্যে এক বিশেষ প্রথা রয়েছে যা আধুনিক পৃথিবীর মানুষের কাছে খুবই অদ্ভুত মনে হতে পারে।হিম্বা উপজাতির একটি চমকপ্রদ রীতি হলো অতিথি সম্মান করার জন্য তাদের স্ত্রীকে অতিথিদের কাছে অর্পণ করা। এই প্রথা তাদের সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
আজ International Hugging Day জড়িয়ে ধরুন আপনার প্রিয় মানুষকে। জানুন এর জাদুকরী উপকারের কথা।
‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’
এটি এমন একটি প্রথা, যেখানে পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের অতিথিদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহিত করেন। ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’ নামের এই রীতি অর্থাৎ অতিথির কাছে স্ত্রীর অর্পণ, হিম্বা সমাজে একটি প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে চলে আসছে। অতিথির প্রতি আত্তিথেয়তা প্রদর্শন করতে গিয়ে, স্বামী তার স্ত্রীর যৌনতা অন্য পুরুষদের সাথে শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন। এমনকি, যৌন ঈর্ষা বা পরকীয়ার চিন্তা এখানে নেই। হিম্বা পুরুষরা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষদের মিলনে কোনো বাধা দেন না এবং এই অভ্যাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।এছাড়াও, হিম্বা পুরুষদের জন্য একাধিক স্ত্রীর অধিকার খুবই সাধারণ। তাদের সমাজে স্ত্রীরা একে অপরকে সতীন হিসেবে গ্রহণ করে এবং নতুন বধূর সাথে সুখীভাবে বসবাস করেন। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, হিম্বা পুরুষদের ৭০% এরও বেশি এমন সন্তান পালন করেন, যার পিতা অন্য পুরুষ। এদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদও খুব সহজ এবং সাধারণ ঘটনা, যা আধুনিক সমাজের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে।
আপনার চুলকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখার জন্য কি করবেন জেনে নিন
তাদের সংস্কৃতিতে কোনো নারী অতিথির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে না চাইলেও, তাকে অন্যভাবে সম্মান জানিয়ে অতিথির ঘরেই রাত কাটানোর প্রথা রয়েছে।হিম্বা সমাজের জীবনধারা এবং সংস্কৃতি চমকপ্রদ হলেও, তাদের সামাজিক রীতি ও আচার তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের মধ্যে পুরুষদের কাছ থেকে গবাদি পশু পাওয়ার বিনিময়ে বিয়ের চুক্তি হয়। পশুপালন, রান্না, ঘর গোছানো, এবং শিশুদের যত্ন নেয়া এমন সমস্ত কাজ পরিবারের মহিলাদেরই করতে হয়। হিম্বা মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন, যা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। তারা রেড আয়রন অক্সাইড এবং পশুর চর্বি দিয়ে নিজেদের ত্বক এবং চুল রাঙান, যা তাদের ত্বককে রক্ষা করে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে।
ছাদের ট্যাংক সহজে পরিষ্কার করবেন কিভাবে? রইল খুব সহজ পদ্ধতি
অধিকাংশ সময় জল না থাকার কারণে, হিম্বা মহিলারা স্নান করেন না। তারা আগুনের ধোঁয়ার মধ্যে বসে থাকেন, যাতে ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে ময়লা বেরিয়ে যায়। গহনা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিভিন্ন অলঙ্কারের মাধ্যমে তারা নিজেদের সামাজিক অবস্থান প্রকাশ করেন। তারা কাঠ, চামড়া, এবং ধাতু দিয়ে তৈরি ব্রেসলেট এবং গলার হার পরেন, যা তাদের ঐতিহ্য ও শ্রেণি প্রতিফলিত করে।এখনকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পশ্চিমি সভ্যতার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের আগমন, আধুনিক শিক্ষা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনছে হিম্বাদের জীবনযাত্রায়। এর ফলে হিম্বা সমাজেও পরিবর্তন আসছে, তবে তারা এখনও নিজেদের প্রাচীন রীতি এবং সংস্কৃতি রক্ষা করতে চেষ্টা করছে।