ব্যুরো নিউজ ১২ জুলাই ২০২৫ : হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার ধরমপুর ব্লকের সিয়াথি গ্রামে এক পোষা কুকুরের অবিশ্বাস্য তৎপরতায় ভয়াবহ ভূমিধসের হাত থেকে রক্ষা পেল প্রায় ৬৭ জন গ্রামবাসী। ৩০শে জুন রাতের দিকে এই অলৌকিক ঘটনাটি ঘটে, যখন প্রবল বৃষ্টিতে গ্রামজুড়ে নেমে আসে ধ্বংসলীলা।
অপ্রত্যাশিত সতর্কবার্তা
৩০শে জুন মধ্যরাতে (কিছু সূত্রে ২৯শে জুন), যখন মান্ডি জেলা জুড়ে মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং ভূমিধসের ভয়াবহতা চলছিল, সিয়াথি গ্রামের এক পোষা কুকুর হঠাৎ করে তীব্রভাবে চিৎকার করতে শুরু করে। গ্রামের বাসিন্দা নরেন্দ্র (কিছু সূত্রে ললিত কুমার) জানান, কুকুরটি তাঁদের বাড়ির দোতলায় (কিছু সূত্রে তিনতলায়) ছিল এবং তার চিৎকার এতটাই কর্কশ ও অস্বাভাবিক ছিল যে ঘুমন্ত মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। নরেন্দ্র প্রথমে বিরক্ত হলেও, কুকুরের ক্রমাগত এবং অদ্ভুত চিৎকারে তিনি ভয় পেয়ে যান। তিনি কুকুরটির কাছে গিয়ে দেখেন, বাড়ির দেয়ালে বিশাল ফাটল ধরেছে এবং ঘরের ভেতরে জল ঢুকছে।
হিমাচলে হলুদ সতর্কতা, কুলুতে হড়পা বানে ক্ষতি
দ্রুত পদক্ষেপ ও জীবনরক্ষা
বিপদ আঁচ করতে পেরেই নরেন্দ্র দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবারকে ডেকে নীচে নামিয়ে আনেন। এরপর তিনি দ্রুত গ্রামের ২০টি পরিবারের প্রত্যেককে সতর্ক করেন এবং বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে অনুরোধ করেন। গ্রামবাসীরা কুকুরটির সতর্কতায় এবং নরেন্দ্রের দ্রুত পদক্ষেপে নিজেদের ঘরবাড়ি, সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে রেখে দ্রুত পার্শ্ববর্তী ত্রিয়াম্বালা গ্রামের নৈনা দেবী মন্দিরে আশ্রয় নেন। তাঁদের গ্রাম ছেড়ে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রবল ভূমিধস নামে এবং গ্রামের প্রায় ১২টি (কিছু সূত্রে প্রায় ৭০টি) বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়, যার অধিকাংশই কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।
‘রকি’ নামের সেই নায়ক
এই ঘটনায় প্রাণ বাঁচানো কুকুরটির নাম ‘রকি’ বলে জানা গেছে (কিছু রিপোর্টে বয়স পাঁচ মাস)। গ্রামবাসীরা রকিকে তাদের ‘রক্ষাকর্তা’ বা ‘নীরব নায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। সিয়াথি গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান দেশরাজ বলেন, “এই কুকুরটির কারণেই আমরা আজ বেঁচে আছি। প্রকৃতপক্ষে ও আমাদের রক্ষা করেছে।”
Natural Disaster ; ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যায় হিমাচল প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
দুর্যোগের ব্যাপকতা ও ত্রাণকার্য
হিমাচল প্রদেশে ২০শে জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য জুড়ে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৫০ জন দুর্যোগজনিত ঘটনায় (ভূমিধস, হড়পা বান, মেঘভাঙা বৃষ্টি) মারা গেছেন। প্রায় ২২৫টি বাড়ি, ৭টি দোকান এবং ২৪৩টি গবাদিপশুর শেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মান্ডি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ১৫৬টি রাস্তা সহ মোট ২৮০টি পথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দুর্ঘটনা কবলিত ৬৭ জন বাসিন্দা বর্তমানে ত্রিয়াম্বালা গ্রামের মন্দিরে অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি সহায়তা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তাৎক্ষণিক ১০,০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতর রাজ্যের ১০টি জেলায় আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে, তবে বহু পরিবার সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা। এই ঘটনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে প্রাণীদের প্রাকৃতিক অনুভূতির গুরুত্বকে আরও একবার সামনে এনেছে।