অশরীরী
ডঃ অরুণ চক্রবর্তী
অন্ধকার হাতি ঘাসের জঙ্গল! গুচ্ছ,
গুচ্ছ জোনাকীর সমারোহ, আলো জ্বলছে, নিভছে! গা ছম্ ছমে, স্থান, সাবেক ব্রিটিশ ইস্ট আফ্রিকান, রেলপথ, মিটার গেজ, আলোআঁধারী থেকে এসে, দূর অন্ধকারে মিলিয়ে গ্যাছে, দূরে সিগন্যাল পোস্টে, কোন বিবাহিতা রমনীর, সিঁথির সিঁদূরের মতো লাল সিগন্যালের আলো! এটিই শেষ ট্রেন ছিলো, মোম্বাসা থেকে কিসুমু, শহরের শেষ ট্রেন সংযোগ! ইন্জিনের ঝিক্ঝিক, ঝিঝ্কিক, দূরের কাছের বাতাসে, অনুরণিত হচ্ছে, সুদূরে হারিয়ে যাবার আগে। আমি দাঁড়িয়ে, এক আমেরিকান বন্ধুর সঙ্গে, বিখ্যাত সাভো (Tsavo) রেল স্টেশনে| যেখানে ১৯ শতকের প্রথম দিকে সাক্ষাৎ শয়তান! মানুষ খেকো, আফ্রিকান সিংহের পাল, ভারতীয় কুলীদের প্রায় প্রতিদিন, তুলে নিয়ে যেতো ! তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য ও অমোঘ মৃত্যুদূত! আমাদের সামনে অন্ধকারে, স্টেশনের চারিপাশে লম্বা লম্বা, হাতি ঘাসের, ধুধু জঙ্গল, যেন এই জঙ্গলের কোন শেষ নেই! সীমানা নেই!প্রায় সাত ফুটের, ওপরে এই হাতি ঘাস গুলো, উচ্চতায়! সহজ যে কোন হিংস্র শ্বাপদের আস্তানা, এই ঘাসের জঙ্গল! আমেরিকান বন্ধু Jim Kerry, আমরা শিকাগোয় এক সঙ্গেই থাকতাম, ও প্রাক্তন মেরিন সীল, ভয়ডর নিয়ে এরা বাঁচেনা, আমি প্রাক্তন ভারতীয় সেনা কমান্ডো অফিসার, প্রচুর মৃত্যু আমার হাতে হয়েছে, বিভিন্ন যুদ্ধে, তাই দুজনেই অকুতোভয়। জীবনকে আমরা বিভিন্ন ভাবে দেখেছি, বুঝেছিও অনেক! Kerry আমাকে জোর করে ধরে এনেছে, কিন্তু, কেন বলেনি! আমি ছোট থেকেই সব কিছু নিয়েই ইয়ার্কী মারি, ঠাট্টা করি, লোককে লোক বলে, মনে করি না, কারণ, প্রথমেই আমাদের অফিসার্স কোর্সে শেখানো হয়, “তোমার সামনে মানুষ তুমি দেখবে না”, কারণ, “ওরা ছাগল,ভেড়ার দল”, অর্থাৎ সিভিলিয়ানরা! “এরা মানুষের মতোন দেখতে হলেও, বস্তুত: চারপেয়ীদের দলেই”! যাইহোক, পরবর্তিতে এটাই অনেকাংশে প্রমানিত হয়েছে। Kerry কে জিজ্ঞেস করি, কিহে, এখন কি করা! Kerry বলে ওঠে, একটু অপেক্ষা করো, আমার বন্ধু আসছে, আরো অনেকে আসবে! আদর আপ্যায়ণ হবে, ভাবছো কেন? আমি সাহসী হলেও বুদ্ধিমান, এই বুদ্ধিই আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অনেকবার বাঁচিয়েছে! ক্রমশ……
পরিচ্ছদ-২
অন্ধকার যেন আরো জমাট বাঁধছে, চারিদিকে, ঝিঁঝিঁর ডাক, কোথ্থেকে, দমকা হাওয়া দিলো, হটাৎ চ্ছোট্ট প্ল্যাটফরমের স্টেশন চও্বর, স্টেশন মাস্টারের, ঘরের দরজা, জানলা গুলো, দুমদাম্ করে খুলে গেল,ঘরের ভেতরে টালীর, ছাদে থেকে দুটি লন্ঠন্ ঝুলছে, পাশের ওয়েটিং রুমের দরজা গুলোও হুটহাট্ খুলতে লাগলো! ওয়েটিং রুমেও চারটি লন্ঠন ঝুলছে, আলো আঁধারীর মায়াবী ছায়া প্রচ্ছায়া নিয়ে! তড়িত বিদ্যুতাহিত, হবার মতোন আমার, মানসিক ও শারীরীক অবস্থা! এ…কি…এ…কি… করে….সম্ভব! এই একবিংশ শতাব্দীতে!! চারিদিকে জন মানব শূণ্য অজগর বিজগর বন বাদাড়! আমি অস্ফুটে জিজ্ঞেস করলাম, জিম আমাকে তুমি, এ কোথায় নিয়ে এলে! আমি দূর পশ্চিমবঙ্গের, কলকাতা শহরের ছেলে,ভারতীয় সেনার এক প্রাক্তনী, সেনা কর্তা,তোমার তো কোন ক্ষতি আমি করিনি, তুমি আমাকে এই পরিস্থিতি তে , এনে ফেল্লে, জিম আমার দিকে আড়চোখে, দেখতে দেখতে, একটা হাভানা চুরুট ধরালো! তার ভাবলেশহীন মুখ মন্ডল, কিছুটা কাঠিন্য নিয়েই সে বল্লে, কাম অন! হোয়াই আর ইউ থিঙ্কিং অল রিডিকিউলাস্ ইম্যাজিন্যারী থিঙ্কস্! ইয়েস নাও, ইউ’র ইন আ প্যারানরম্যাল ওয়ার্লড! বাট হ্যাভ গাটস্, এন্ড কনফিডেন্স ট্যু আন্ডার মাইন্ড অল দ্যাট গনো হ্যাপেন নাও। আমি বলি, জীম, হোয়াট ড্যু ইউ সে! হোয়াট’স গোয়েইং ট্যু হ্যাপেন? এন্ড হোয়াই ইউ’ভ পুট মি ইন দিস্ আননেসেসারী ফ্র্যাকাস?! হোয়াই?হোয়াই? মাই ফ্রেন্ড, এই কথোপকথনের মাঝেই, জিম লাফিয়ে উঠলো, কাউকে আমার ঠিক পেছনে দেখে, মূহুর্তে চুরুট, খসে পড়ে তার মুখ থেকে! একটা সম্ভ্রমের ছায়া ঘনিয়ে এলো তার মুখে,চোখে! আমি এক জন মন্ত্রপূত স্থানু মানুষ, প্রচন্ড ঘামছি! কোনও শব্দই আমার মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে না! আমাকে স্ক্রু দিয়ে যেন কেউ প্ল্যাটফর্মে গেঁথে দিয়েছে! ঐ গরম সন্ধ্যেয় আমার বাঁদিকের কাঁধে, একটি শক্তিশালী হাত নেমে এলো! হিমশীতল বরফের ছোঁয়া, হাই! মি: ঊলুম্বা, ইনি আমার ভারতীয় বন্ধু, অরুণ, আমেরিরাতে আমাদের পরিচয়, চিকাগোয়, ও কালো মানুষদের খুব ভালোবাসে, কাই মাএ তিনদিনের জন্য, তোমার সঙ্গে দেখা করতে, ছুটে এলাম! এবার বিশাল ছায়া মূর্তি আমার আর জিমির মাঝখানে এসে দাঁড়ালো! মাসাইদের ভাষায় বলে ওঠে-সোপা..সরাসরি আমার মাথায় তার বিশাল হাতের তেলো রাখলে…আর কাক তাড়ুয়া ভুষুন্ডী মুখের দুধ সাদা বড় বড় দাঁত বার করে, হাসকে লাগলো! আমি ভারতীয় সেনার প্রতিনিধি,তাই, মানসিক ও শারীরীক শক্তি একই সঙ্গে নিংড়্ নিয়ে, তোতলার মতোন বল্লাম, সো..ও..পা.. অর্থাৎ হ্যালো!জিম আমাকে পরিচয় করালো, এই সাভো স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, প্যাট্রিক ঊলুম্বা!
(Registered Under Copy Right Act)