ব্যুরো নিউজ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : থিম পুজোর প্রতিযোগিতার যুগেও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন বনেদি বাড়ি সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপূজা। জমিদার লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার তার স্ত্রী ভগবতী দেবীর ইচ্ছায় ১৬১০ সালে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। বর্তমানে এই পরিবারের মোট আটটি বাড়িতে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিমা ও চালচিত্রের বিশেষত্ব
সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপূজার প্রতিমার মুখ লাল বা হালকা সোনালী রঙের হয়ে থাকে এবং অসুরের রঙ হয় সবুজ। এই বাড়ির পুজোর একটি অন্যতম বিশেষত্ব হলো প্রতিমার চালচিত্র। এখানে ছিন্নমস্তা, বগলা, মাতঙ্গী, কমলাকামিনী-সহ দশমহাবিদ্যা এবং রাধাকৃষ্ণ একসঙ্গে পূজিত হন। এই অনন্য চালচিত্রটি এই পুজোকে অন্যান্য পুজো থেকে আলাদা করে তোলে।
Durga Puja : তিনশো বছরের ঐতিহ্য নিয়ে আজও অমলিন শেওড়াফুলি রাজবাড়ির দুর্গাপূজা
আটটি বাড়ির পুজো এবং ভোগ
সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের এই পুজো মোট আটটি বাড়িতে হয়। এর মধ্যে ছয়টি পুজো হয় বরিশাতে: আটচালা বাড়ি পুজো, বড় বাড়ির পুজো, বেনাকি বাড়ি পুজো, মেজো বাড়ি পুজো, কালীকিঙ্কর ভবন পুজো এবং মাঝের বাড়ি পুজো। সপ্তম পুজোটি হয় বিরাটি-তে, যা বিরাটি বাড়ির পুজো নামে পরিচিত। অষ্টম পুজোটি হয় নিমতাতে, যা নিমতা পাঠানপুর বাড়ির পুজো নামে জনপ্রিয়।
পুজোর ভোগেও রয়েছে বৈচিত্র্য। পূর্বে এই পুজোর সময় ১৩টি ছাগল এবং ১টি মহিষ বলি দেওয়া হত। বর্তমানে সাবর্ণ রায় চৌধুরীর পরিবারের সব বাড়িগুলিতে আমিষ ভোগের আয়োজন করা হলেও, শুধুমাত্র নিমতার বাড়িতে সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। এই আটটি পুজোতেই বিদ্যাপতি রচিত দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী রীতি-নিয়ম মেনে পুজো করা হয়।
দশমী ও বিসর্জন পর্ব
দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পরেই প্রতিমার সামনে বিজয়া পর্ব পালন করা হয়। এরপর প্রতিমা বাবুঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। আজও কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলোর মধ্যে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের পূজা তার স্বকীয়তা এবং আভিজাত্য বজায় রেখেছে, যা কলকাতাবাসীর কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।