ব্যুরো নিউজ,১৬ অক্টোবর:কলকাতার হাই কোর্টে বিচারপতি রবি কিসান কপূরের এজলাসে শুরু হয় শুনানি শুরু হয় দুপুর ২টো ১৮ মিনিটে। ধর্মতলায় তখন জমায়েত ধীরে ধীরে বাড়ছে। রাজ্য সরকার দ্রোহের কার্নিভালের অনুমতি বাতিলের পক্ষে যুক্তি দিতে শুরু করে। তারা সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে দিল্লির শাহিনবাগের প্রসঙ্গ টেনে আনে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পাল্টা যুক্তি দেন। এই সময় ধর্মতলা চত্বরে ভিড় বাড়তে থাকে।দুপুর ২টো ৫৩ মিনিটে বিচারপতি নির্দেশ দেন, দ্রোহের কার্নিভাল করা যাবে। রেড রোডের পুজো কার্নিভালের সঙ্গে এর কোনো সংঘাত নেই। বিচারকের নির্দেশ ঘোষণা মাত্রই ধর্মতলা চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জনতা পুলিশের ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর পুলিশও বাধ্য হয় ব্যারিকেড সরিয়ে দিতে। এরপর জনস্রোত রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে ধেয়ে যায়, ঢাকের বাদ্যি এবং স্লোগান শোনা যায়।
ধর্মতলায় সুজিত বসুর গাড়িতে আক্রমণঃ মানববন্ধনের মাঝে উত্তেজনা
পুলিশ কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ
রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ আগেই জানিয়েছিলেন যে দ্রোহের কার্নিভালের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। সোমবার কলকাতা পুলিশের তরফে ১৬৩ ধারা (প্রাক্তন ১৪৪) জারি করা হয় ধর্মতলা ও সংলগ্ন এলাকায়। পুলিশের এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় এবং আদালত তা খারিজ করে দেয়। বিচারপতি মন্তব্য করেন, “আর কোথায় ১৬৩ ধারা জারি করা বাকি রয়েছে?” শুনানি শেষে একের পর এক মিছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছতে থাকে। দুই লেন ভর্তি হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। পুলিশ কর্মীদের সামনে গিয়ে সাধারণ মহিলারা বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। রাস্তায় পড়েছিল দলা পাকানো শিকল।পুলিশ যখন তা সরিয়ে নিতে যায়, তখন দেখা যায় আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অনেকেই প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং মাতঙ্গিনী হাজরার ছবি নিয়ে এসেছিলেন, তাতে লেখা ছিল ‘প্রীতিলতা-মাতঙ্গিনীদের বাংলায় ধর্ষকদের ঠাঁই নেই’। কিছু পোস্টার কলকাতা পুলিশের গাড়িতে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল।এদিকে, আইনজীবী বিকাশও রানি রাসমণিতে উপস্থিত ছিলেন, এবং তাকে ঘিরে উৎসাহ দেখা যায়। ডাক্তার মানস গুমটা বলেন, “এমন আনন্দ অনেক দিন পাইনি।” দ্রোহের কার্নিভাল আয়োজন করেছিল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডাক্টর্স, কিন্তু সেখানে সিপিএমসহ আরও কিছু সংগঠনও যুক্ত হয়েছিল।
রেড রোডের কার্নিভালে আটক তপোব্রত রায়ঃ আন্দোলনের নতুন মাত্রা
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জমায়েতে স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে ওয়াকিটকি দেখা যায়।সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা এই জমায়েতে আসেননি। তবে মঙ্গলবারের ভিড়ে অনেক ছোট-মাঝারি নেতাদের দেখা গেছে। উদ্যোক্তারা কালো বেলুনের বন্দোবস্ত করেছিলেন, কিন্তু সেগুলো উড়ানোর পর দেখা যায় পুজো কার্নিভালের দিকে না গিয়ে অন্য দিকে ভেসে যাচ্ছে। এক যুবক কৌতূহলীভাবে বলেন, “হাওয়াটা মমতার পক্ষেই কিন্তু রয়ে গেল!”এদিকে, ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধন শুরু হয়। সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়তে থাকে এবং ডোরিনা ক্রসিং থেকে ধর্মতলা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা কলকাতা পুলিশের ডিসি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। এই পরিস্থিতিতে গোটা এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভের মুখে পড়তে থাকে, এবং পুলিশ কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে।