ব্যুরো নিউজ ৫ জুন : এনডিএ (NDA) সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত দেশব্যাপী জাতিগত জনগণনা (Caste Census) ২০২৭ সালের ১লা মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে, যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দুটি ধাপে পরিচালিত হতে যাওয়া এই জনগণনা, বিশেষ করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘তুষ্টিকরণের রাজনীতি’ এবং ‘বিভাজনমূলক কৌশল’ অবলম্বনের অভিযোগ এনেছে ক্ষমতাসীন দল।

জাতিগত জনগণনার সূচনা ও পর্যায়ক্রম:
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বুধবার (৪ জুন, ২০২৫) ঘোষণা করেছে যে, ২০২৭ সালের জনগণনায় জাতিগত গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যার জাতীয় রেফারেন্স তারিখ হবে ২০২৭ সালের ১লা মার্চ। তবে, লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো তুষারাবৃত অঞ্চলগুলির জন্য রেফারেন্স তারিখ হবে ২০২৬ সালের ১লা অক্টোবর। ২০২৫ সালের ১৬ই জুন জনগণনা আইন, ১৯৪৮-এর ধারা ৩ অনুযায়ী এই জনগণনার আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে পারে।

এই জনগণনা দুটি ধাপে সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ধাপে, ২০২৬ সালের শেষের দিকে তুষারাবৃত অঞ্চলগুলিতে গণনা শুরু হবে, এবং ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাকি অংশে দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ধাপ শুরু হবে, যা ১লা মার্চ ২০২৭-এর মধ্যে শেষ হবে। এটি হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল জনগণনা, যেখানে নাগরিকরা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নিজেদের তথ্য দিতে পারবেন, যা প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর এবং ত্রুটিমুক্ত করবে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

প্রথম ধাপে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চল এবং উদ্দেশ্য:
প্রাথমিকভাবে লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর সহ পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের জনগণনা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং জাতিগত বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের যুক্তি, পার্বত্য উপজাতিদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জন্য আরও সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

জনগণনার প্রয়োজনীয়তা:  ব্যাখ্যা এবং বিভাজন
সরকার এই জনগণনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কিছু রাজ্যে ‘তুষ্টিকরণের রাজনীতি’ এবং ‘বিভাজনমূলক কৌশলের’ তীব্র সমালোচনা করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও কর্ণাটকের  রাজ্য সরকারগুলি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত অন্তর্ভুক্তির ‘অপ্রমাণিত প্রচেষ্টা’ চালিয়েছে, যা ‘স্বচ্ছতার অভাব’ এবং ‘ বৈষম্যভিত্তিক তোষণ ‘-কে নির্দেশ করে। এই ধরনের পদক্ষেপ সমাজে সন্দেহ তৈরি করেছে।

বিজেপি (BJP) এবং এনডিএ জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, কংগ্রেস (INC) এবং সমাজবাদী পার্টি (SP), তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCP), ডিএমকে (DMK), এবং আরজেডি (RJD) এর মতো আঞ্চলিক দলগুলি ‘বিভাজনমূলক রাজনীতি’র অনুশীলন করে। এই অভিযোগগুলি জাতিভিত্তিক জনগণনা দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে এনডিএ প্রশাসন মনে করছে। তাদের মতে, আনুষ্ঠানিক জনগণনার মাধ্যমে জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হলে তা রাজনৈতিকীকরণের সুযোগ কমাবে এবং তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অভিন্নতা নিশ্চিত করবে।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক ন্যায়বিচার:
ভারতে ১৯৩১ সালের পর থেকে মূল জনগণনায় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি, শুধুমাত্র তফসিলি জাতি (SC) এবং তফসিলি উপজাতিদের (ST) তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (OBC) জনসংখ্যা অনুমানকে অস্পষ্ট করে তুলেছে, যা মন্ডল কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রণয়নেও প্রভাব ফেলেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতিগত জনগণনা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি দারিদ্র্য, আঞ্চলিক বৈষম্য এবং লিঙ্গভিত্তিক অসমতার মতো বিষয়গুলিকে তুলে ধরতে পারে, যা সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। তবে, সমালোচকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, জাতিগত জনগণনা সমাজে জাতিসত্তা সচেতনতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং বিভেদ বাড়াতে পারে, যা ‘জাতিবিহীন সমাজ’ গঠনের সাংবিধানিক লক্ষ্যের পরিপন্থী। তা সত্ত্বেও, সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে এই জনগণনা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে, যা দীর্ঘদিনের কাঠামোগত বৈষম্য দূর করতে সহায়ক হবে।

এই জনগণনা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ভারতের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নীতি নির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলবে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর