ব্যুরো নিউজ ১১জুলাই:বলিউডে ‘ঠাকুর’ নামে চিহ্নিত হয়ে যাওয়া অভিনেতা সঞ্জীব কুমার ছিলেন এক বিরল প্রতিভা, যার ব্যক্তিজীবন ছিল সমানভাবে রঙিন এবং বেদনাময়। মঞ্চ থেকে সেলুলয়েড—যাত্রাটা ছিল দুর্দান্ত, কিন্তু হৃদয়ের কোণে জমেছিল অপূর্ণ স্বপ্নের মেঘ।
ভালোবাসা পেয়েও ভালোবাসার মানুষটিকে জীবনসঙ্গী করতে পারেননি
১৯৩৮ সালের ৯ জুলাই গুজরাতের সুরতে জন্ম হরিহর জেঠালাল জরীওয়ালার। পরে অভিনয় জগতে এসে হয়ে ওঠেন সঞ্জীব কুমার। পরিবার ছিল কড়া নিরামিষাশী, বাড়িতে আমিষ তো দূর, এমনকি রান্নাঘরের আশেপাশেও তা ঢোকা নিষিদ্ধ। কিন্তু সঞ্জীবের পছন্দ ছিল একেবারেই বিপরীত। নিজের খাবারের স্বাধীনতা বজায় রাখতে এক কামরার ভাড়া বাড়ি নেন মুম্বইয়ের পালি হিলে, যেখানে নির্ভয়ে মাছ-মাংস খেতে পারতেন।
সঞ্জীব কুমারের জীবনে ছিল বহু নারী, কিন্তু কোনও সম্পর্কই পরিণয়ে পৌঁছয়নি। অঞ্জু মহেন্দ্রু একবার বলেছিলেন, “ওর জীবনে এত মেয়ে ছিল যে নাম মনে রাখার বদলে সংখ্যা দিয়ে চিনত—‘৩ নম্বর ফোন করেছিল, ৯ নম্বর আজ খাবার এনেছে’।”
১৯৭২ সালে ‘সীতা অউর গীতা’-র সেটে হেমা মালিনীর সঙ্গে সঞ্জীবের আলাপ হয়। বলা হয়, হেমার প্রেমে পড়েন তিনি এবং বিয়ের প্রস্তাবও দেন। তবে সঞ্জীব চেয়েছিলেন বিয়ের পর হেমা অভিনয় ছাড়বেন, যা হেমার কাছে ছিল অগ্রহণযোগ্য। ফলত সেই সম্পর্ক এগোয়নি।
আরও এক অভিনেত্রী সুলক্ষ্মণা পণ্ডিত সঞ্জীবকে ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তখন সঞ্জীব ছিলেন হেমার প্রেমে। সুলক্ষ্মণা এরপর আর কখনও বিয়ে করেননি। শোনা যায়, শাবানা আজমির প্রতিও ছিল সঞ্জীবের টান। কিন্তু মায়ের অমতে কোনও সম্পর্কে জড়াতে চাননি তিনি। শাবানার সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায়।
বিয়ের ক্ষেত্রে এতবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর সঞ্জীব নারীদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। অঞ্জু বলেছিলেন, “ও ভাবত, মেয়েরা শুধুই টাকার জন্য আসে। অনেকেই স্নেহ থেকে কাছে এসেছিল, রান্না করে দিত, ও বুঝতে পারেনি।”
ব্যক্তিজীবনে সঞ্জীব ছিলেন মজা করতে ভালোবাসা, খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডার মানুষ। মদ্যপান এবং আমিষ খাবারের আসর বসত বন্ধুমহলে, যেখানে মাঝেমধ্যে হাজির থাকতেন শাম্মি কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহা, রণধীর কাপুর, সচিন পিলগাঁওকর প্রমুখ।
কিন্তু অতিরিক্ত জীবনযাপন শরীরে চাপ ফেলতে শুরু করে। একাধিকবার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তিনি। প্রথম বার অস্ত্রোপচার করলেও দ্বিতীয় বার আর বাঁচানো যায়নি। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন সঞ্জীব কুমার।
জীবনের শেষের দিকে নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। বহু বছর চেষ্টা করে একটি সম্পত্তি কেনেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়—সেই সম্পত্তির বৈধ মালিকানা পাননি ভুল কাগজপত্রের কারণে। এই অপূর্ণ ইচ্ছাটিও থেকে যায় তাঁর মতোই অসম্পূর্ণ।
সঞ্জীবের মৃত্যুর পরে তাঁর আরও দশটি ছবি মুক্তি পায়। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে ভারতীয় ডাক বিভাগ একটি বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
সঞ্জীব কুমার—একজন অভিনেতা যিনি শত গ্ল্যামারের মাঝেও ছিলেন একাকীত্বে আক্রান্ত। ভালোবাসা পেয়েও ভালোবাসার মানুষটিকে জীবনসঙ্গী করতে পারেননি। অভিনয়ের মঞ্চে অমর হলেও, বাস্তব জীবনে ছিলেন অসমাপ্ত এক উপন্যাস।