ব্যুরো নিউজ ১৬ জুলাই ২০২৫ : বাংলাদেশের ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি ভেঙে ফেলার ঘটনায় ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ঐতিহাসিক এই কাঠামোটি মেরামত ও পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) থেকে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীর দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি, যা তার দাদা ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছিল, তা ভেঙে ফেলা হচ্ছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে যে, এই সম্পত্তিটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন এবং “এটি জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে”।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-স্মৃতির অবমাননা: শাহজাদপুরে কবিগুরুর কাচারিবাড়িতে ভাঙচুর, বিজেপির প্রতিক্রিয়া
জাদুঘর করার প্রস্তাব
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “ভবনটির ঐতিহাসিক মর্যাদা, যা বাংলা সাংস্কৃতিক নবজাগরণের প্রতীক, বিবেচনা করে এটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং একটি সাহিত্য জাদুঘর হিসেবে এর মেরামত ও পুনর্গঠনের বিকল্প পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। এটি ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন সংস্কৃতির প্রতীকও হবে।” মন্ত্রণালয় আরও যোগ করেছে যে, “ভারত সরকার এই উদ্দেশ্যে সহযোগিতা বাড়াতে ইচ্ছুক।”
বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনা
ময়মনসিংহ শহরের হরকিশোর রায়চৌধুরী রোডে অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়িটি ভেঙে একটি আধা-কংক্রিটের কাঠামোতে ‘শিশু একাডেমি’ তৈরি করার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম এই খবরটি প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর তথ্য অনুযায়ী, এই বাড়িটি একসময় বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছিল। পত্রিকাটি জানিয়েছে যে, এই ভাঙার ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তির মুখে পড়েছে, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন যে এটি শহরের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ঐতিহ্যের এক অপূরণীয় অংশ মুছে ফেলবে।
খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির ভাঙল ইউনূস প্রশাসন: হিন্দুদের উপর আক্রমণের নতুন দৃষ্টান্ত
কর্তৃপক্ষের অবস্থান
তবে, কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলছে যে, ভাঙার কাজটি যথাযথ পদ্ধতি এবং “প্রয়োজনীয় অনুমোদন” মেনেই করা হচ্ছে।
ঢাকার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, সম্পত্তিটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হওয়া সত্ত্বেও, ভবনটি সুরক্ষার জন্য তাদের বারবার অনুরোধ শোনা হয়নি।
উল্লেখ্য, সত্যজিৎ রায় বিশ্ব সিনেমার অন্যতম সম্মানিত চলচ্চিত্র নির্মাতা, যিনি মার্টিন স্করসেস-এর মতো বহু মহান চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন। স্করসেস ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘রেজিং বুল’, ‘দ্য ডিপার্টেড’, ‘শাটার আইল্যান্ড’ এবং আরও অনেক চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত।