ব্যুরো নিউজ,৭আগস্ট: শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপক মহম্মদ ইউনুস। তার পরিচয় তিনি বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সেই দেশের দরিদ্র মানুষকে জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়ার কাজটা শুরু করেছিলেন। ইউনূসের সেই ব্যাংক বহু শাখা স্থাপন করেছে। আর সেই কারণেই তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর অনুরাগী থাকলেও হাসিনার চক্ষুশূল ছিলেন ইউনূস
বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ইলিশের দাম কমবে?
এবার সেই মহম্মদ ইউনূসকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করলো বাংলাদেশবাসী। তবে মোঃ ইউনূস একসময়ে হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরাগী ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি (বিসিসি) তৈরি করে পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ইউনূস। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র। মুজিবুরের মৃত্যুর পরে হাসিনার সঙ্গেও একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ভালই সম্পর্ক ছিল ইউনূসের। কিন্তু পরে বিভিন্ন কারণে হাসিনার সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। গরিব মানুষকে বাংলাদেশে সুদের বিনিময়ে যেহেতু তিনি ঋণ দিতেন অর্থাৎ তার গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের মানুষকে বিনা সুদে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া শুরু করেছিল, এই কারণে হাসিনা সর্বসমক্ষে ইউনূসকে গরিবের রক্তচোষা বলতেও ছাড়েননি।
হাসিনার আক্রমণের নিশানায় উঠে এসেছিলেন এই ইউনূস। বহু মামলায় জড়িয়ে ব্যাংকের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জেলেও পাঠাতে চেয়েছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়েও তার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে মহম্মদ ইউনুস বড় হয়েছিলেন। তাকে একটা সময়ে গরিবের ব্যাংকার হিসেবে সেই দেশ পরিচিতি দেয়। সারা বিশ্বেই প্রশংসা শুরু হয়। ২০০৬ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও বহু সম্মান পেয়েছেন ইউনূস। আর এর পরেই হাসিনার বিরোধিতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন ইউনূস।
হাসিনা আপাতত দিল্লিতে,সমস্ত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ভারত,ঘোষণা জয়শঙ্করের
একটা সময় রাজনীতিতে আসার জন্য মোঃ ইউনূস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেই পথে পা বাড়ান নি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে অভিযোগ দায়ের হতেই ছয় মাসের জেল হয়। জামিন পেলেও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে ২০০ টির বেশি মামলা হয়। এর আগেও একবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ছিল মোঃ ইউনূসের। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে ইউনূসকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সেবার তিনি প্রত্যাখ্যান করলেও এবার আর সেই দাবি ফেলে দেন নি। দেশে প্রশংসাও যেমন তার ছিল, অনেক সমালোচনা শুনেছেন ইউনূস। তবে দেশের এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চরম নৈরাজ্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাও ইউনূসের কাছে এক চ্যালেঞ্জ। হাসিনার সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে চললেও তিনি যে একটা সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরাগী ছিলেন সেই বিষয়টিও সর্বজনবিদিত।