ব্যুরো নিউজ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: সাহারা গোষ্ঠীর আর্থিক অনিয়মের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) সাহারা ইন্ডিয়া, এর প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত রায়, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। এটি একটি বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারি সম্পর্কিত, যার পরিমাণ প্রায় ১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কলকাতা-র প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (PMLA) আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগের মূল বিষয়বস্তু
চার্জশিটে সাহারা ইন্ডিয়া ও তার সহযোগী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীকে প্রতারণা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের উচ্চ হারে লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা সেই অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে সুব্রত রায়ের স্ত্রী স্বপ্না রায়, পুত্র সুশান্তো রায় এবং অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তা যেমন জেপি বর্মা ও অনিল আব্রাহামের নাম উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই ব্যক্তিরা প্রতারণামূলক কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পলাতক সুব্রত রায়ের পুত্র
তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সুব্রত রায়ের পুত্র সুশান্তো রায়কে এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেছে। ইডি তাকে একাধিকবার সমন পাঠালেও তিনি কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির হতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, ইডি তাকে আদালতে হাজির করার জন্য একটি জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে।
ইডি-র অনুসন্ধান ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
বিচার নিশ্চিত করতে ইডি ২০২৩ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে সাহারা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক শহরে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসাবে, ইডি ৭০০ একরের বেশি জমি-সহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, যা সাহারা গোষ্ঠীর অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও, সাহারা সংস্থার বিরুদ্ধে পিএমএলএ-র অধীনে ৫০০টিরও বেশি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই বহু অভিযোগ আর্থিক অপকর্মের ব্যাপকতা এবং কেলেঙ্কারির সুদূরপ্রসারী প্রভাব তুলে ধরেছে, যা এখন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়েছে।
হামারা ইন্ডিয়া কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে তদন্ত
কলকাতা আদালতে দাখিল করা চার্জশিটটি মূলত সাহারা গোষ্ঠীর সামগ্রিক আর্থিক তছরুপের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, ইডি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ক্ষেত্র থেকেও অর্থ তছরুপের সন্ধান করছে। বিশেষ করে, ইডি ‘হামারা ইন্ডিয়া কো-অপারেটিভ সোসাইটি’-এর ওপর নজর রেখেছে, যেখানে ২৪,০০০ কোটি টাকার বেশি তহবিল সংগ্রহ করার প্রমাণ মিলেছে। এই সমবায় সমিতির ওপর চলমান তদন্ত সাহারার প্রতারণামূলক কার্যক্রমের ব্যাপকতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।