ব্যুরো নিউজ ৪ আগস্ট ২০২৫ : উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে বাস্তুচ্যুত এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পুনর্বাসিত পরিবারগুলিকে আইনি জমির মালিকানা অধিকার প্রদানের জন্য দ্রুত ও সময়বদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
‘ঐতিহাসিক বিচার’ এবং ‘জাতীয় কর্তব্য’
মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টিকে কেবল ভূমি হস্তান্তরের চেয়েও বেশি কিছু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি হাজার হাজার পরিবারের কয়েক দশকের সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানানোর একটি সুযোগ, যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সঠিক পুনর্বাসনের জন্য অপেক্ষা করেছেন। এই পরিবারগুলির সাথে সংবেদনশীলতা এবং মর্যাদার সাথে আচরণ করতে হবে; এটি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।” যোগী আদিত্যনাথ এই উদ্যোগকে “ঐতিহাসিক বিচার” এবং “জাতীয় কর্তব্য” বলে অভিহিত করেছেন। তার লক্ষ্য হলো ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা এই পরিবারগুলির মর্যাদা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা। এই সিদ্ধান্ত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-এর চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে চায়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও প্রশাসনিক জটিলতা
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশভাগের পর ১৯৬০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবার পিলভিট, লখিমপুর খেরি, বিজনোর এবং রামপুর জেলায় পুনর্বাসিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ট্রানজিট ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদের বসতি স্থাপন করা হয় এবং কৃষি জমি প্রদান করা হয়, কিন্তু রেকর্ডগুলিতে অসঙ্গতি এবং প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে বেশিরভাগ পরিবার এখনও আইনি মালিকানা পায়নি।
মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে যে, যদিও বেশ কয়েকটি গ্রামে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে, তবে ভূমি বন বিভাগের অধীনে রেকর্ড হওয়া, অসম্পূর্ণ হস্তান্তর প্রক্রিয়া এবং শারীরিক দখলের অভাব সহ বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক বাধার কারণে অনেক পরিবার আনুষ্ঠানিক জমির অধিকার পাননি। কিছু এলাকায়, অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা পরিবারগুলিকেও পুনর্বাসিত করা হয়েছে, কিন্তু তারা এখনও আইনি মালিকানা ছাড়া রয়ে গেছেন।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং নতুন আইনি কাঠামো
বর্তমান মূল্যায়নে দেখা গেছে যে, অনেক গ্রামে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলি বছরের পর বছর ধরে জমি চাষ করছে এবং এমনকি স্থায়ী বাড়িও তৈরি করেছে। তবুও, তাদের নাম এখনও সরকারি ভূমি রেকর্ডে নেই। এর বিপরীতে, কিছু মূল বরাদ্দকারী আর সেইসব এলাকায় বসবাস করেন না। উপরন্তু, কিছু এলাকায়, ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় আইনি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না করেই জমি দখল করেছে, যা আরও জটিলতা তৈরি করেছে।
এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য, মুখ্যমন্ত্রী ২০১৮ সালে গভর্নমেন্ট গ্রান্ট অ্যাক্ট বাতিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিকল্প আইনি ব্যবস্থা অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি কর্মকর্তাদের এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে নতুন বিধানগুলি অন্বেষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সামাজিক ন্যায় ও মানবিকতার দৃষ্টিকোণ
মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, “এটি কেবল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়; এটি সেইসব বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলিকে বিচার দেওয়ার দিকে একটি সংবেদনশীল এবং ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যারা কয়েক দশক ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই প্রচেষ্টাটি সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবতা এবং জাতীয় দায়িত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। এটি দীর্ঘকাল ধরে উপেক্ষিত জীবনগুলিকে মর্যাদা ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ।”
সরকারের পরিকল্পনায় বৈধ দাবিদারদের জরিপ ও যাচাইকরণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, রাজস্ব রেকর্ড আপডেট করা এবং নথিবিহীন পরিবারগুলিকে আইনি ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই পদক্ষেপটি সামাজিক গোষ্ঠী এবং ক্ষতিগ্রস্ত শরণার্থী পরিবারগুলির দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে, যারা এটিকে কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রহীন হিসাবে বিবেচিত হওয়ার পর একটি “নতুন ভোর” হিসাবে দেখছেন।