ব্যুরো নিউজ ২২ জুলাই ২০২৫ : এক যুগান্তকারী মাইলফলক স্থাপন করে, বিটস পিলানির হায়দ্রাবাদ ক্যাম্পাসের দুই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ ‘অ্যাপোলোন ডায়নামিক্স’ সফলভাবে ভারতীয় সেনাকে তাদের রাডার-প্রুফ কামিকাজে ড্রোন সরবরাহ করেছে। এই অর্জন ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি খাতে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন উদ্ভাবনের এক বড় সাফল্যের প্রতীক। স্টার্টআপটি চালু করার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই এই দুই ছাত্র তাদের পণ্য সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের অদম্য জেদ এবং দ্রুত কার্যকারিতার প্রমাণ।
উদ্দেশ্য: আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন
জয়ন্ত খাত্রী, একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র, এবং তার সঙ্গী সৌম্য চৌধুরী এই ড্রোনগুলি বিশেষভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডের জন্য তৈরি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, এই স্টার্টআপটি চালু করার পেছনে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলা এবং বিদেশী প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উপর নির্ভরতা কমানো। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
Russian Navy : অ্যাডমিরাল কুজনেতসভের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, বিমানবাহী রণতরী শক্তি হারাচ্ছে রাশিয়া?
লিঙ্কডইন থেকে যুদ্ধক্ষেত্র: এক অভিনব যাত্রা
খাত্রী জানিয়েছেন, তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার আশায় পাঠানো কিছু “কোল্ড ইমেল” দিয়ে। তাদের এই প্রচেষ্টার ফল আসে যখন একজন কর্নেল তাদের ইমেলের জবাব দেন এবং চণ্ডীগড়ে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। একাধিক সফল প্রদর্শনের পর, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে, যা তাদের স্টার্টআপের আনুষ্ঠানিক জন্মকে চিহ্নিত করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, দৃঢ় সংকল্প এবং সঠিক যোগাযোগ থাকলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
কামিকাজে ড্রোনের অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য
অ্যাপোলোন ডায়নামিক্স দল একটি উচ্চ-গতির কামিকাজে ড্রোন তৈরি করেছে যা ৩০০ কিমি/ঘন্টা ছাড়িয়ে গতিতে পৌঁছাতে সক্ষম – যা প্রচলিত বাণিজ্যিক UAVগুলির চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ দ্রুত। এটি অত্যন্ত নির্ভুলতার সাথে ১ কেজি পেলোড বহন করতে পারে এবং রাডার সিস্টেম দ্বারা এটিকে শনাক্ত করা অসম্ভব। এই অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্যগুলি ভারতীয় সেনাকে শত্রুদের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে লড়াই করতে সাহায্য করবে।
Akash Prime : ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায় আকাশ প্রাইমের জোড়া আঘাত , ভারতের প্রতিরক্ষায় নতুন দিগন্ত
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: আরও উন্নত প্রযুক্তির দিকে
বর্তমানে ছয় সদস্যের এই ছাত্র দলটি উন্নত VTOL (উল্লম্ব টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং) এবং ফিক্সড-উইং ড্রোন প্ল্যাটফর্ম তৈরির দিকে কাজ করছে। এই উদ্ভাবনগুলির লক্ষ্য হল বিভিন্ন ভূখণ্ডে অপারেশনাল নমনীয়তা বৃদ্ধি করা। তাদের এই ধারাবাহিক গবেষণা ও উন্নয়ন ভারতীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিটস অধ্যাপকের প্রশংসা: এক ঝলকে সাফল্যের সূত্র
বিটস পিলানির অধ্যাপক সংকেত গোয়েল এই ছাত্রদের সাফল্যে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি স্টার্টআপটির দ্রুত অগ্রগতি এবং প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তারা যা অর্জন করেছে তা দেখে সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাদের স্টার্টআপ ইতিমধ্যেই সশস্ত্র বাহিনীর কাছ থেকে একাধিক অর্ডার পেয়েছে।” অধ্যাপক গোয়েলের এই মন্তব্য ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী প্রতিভার স্বীকৃতি। এই সাফল্য নিশ্চিতভাবে অন্যান্য তরুণ উদ্ভাবকদেরও প্রতিরক্ষা খাতে কাজ করতে উৎসাহিত করবে।