suvendu adhikari vs mamata banerjee

ব্যুরো নিউজ ১৭ জুলাই ২০২৫ :  পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছেন, যা রাজ্যে ভোটার তালিকাভুক্তির হার বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ অস্বীকার করে অনুপ্রবেশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন।

শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ: রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং ভোটার বৃদ্ধি

বুধবার নির্বাচন কমিশনে বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন যে, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি দাবি করেন, সারা দেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। তার অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া মিত্রকে পাঠিয়েছিলেন যাতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা গ্রহণ করেনি। এরপরই রাজ্যের ভোটার তালিকায় জনসংখ্যার হার বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের আশপাশের জেলা ও এলাকাগুলোতে এই বৃদ্ধির হার তাৎপর্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শুভেন্দু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ জাল আধার ও ভোটার কার্ডের কারখানায় পরিণত হয়েছে।” তিনি উদাহরণস্বরূপ কিছু এলাকার ভোটার বৃদ্ধির হার তুলে ধরেন: ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে ২৪.৭৭%, মাথাভাঙ্গায় ২১.৭৯%, কোচবিহার উত্তরে ২১.৫৯%, কোচবিহার দক্ষিণে ১৯.৪৭%, শীতলকুচিতে ২৪.৬২%, দিনহাটায় ২৫.৯৩%, তুফানগঞ্জ, কুমারগ্রামে ২১.১০%, এবং কালচিনিতে ২৩.৩২% ভোটার বেড়েছে। সেখানে জাতীয় বৃদ্ধি মাত্র ৭%। তিনি আরও দাবি করেন, কলকাতার পাশে রাজারহাট, নিউটাউন, কসবাতেও জনবিন্যাস বদলে গেছে এবং এই জায়গাগুলোতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢোকানো হয়েছে।
এছাড়াও, শুভেন্দু অধিকারী উল্লেখ করেন যে উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট, স্বরূপনগর, হিঙ্গলগঞ্জ, বাদুড়িয়া, মিনাখাঁয় এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ১৮.২০% ভোটার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি ক্যানিং, ভাঙড়, কুলতলি, গোসাবা, সাগর, বগরাহাট, মেটিয়াবুরুজের মতো এলাকাগুলোতেও জনবিন্যাস বৃদ্ধির কথা জানান।

শিশির বাজোরিয়া এবং শঙ্কর ঘোষকে পাশে বসিয়ে শুভেন্দু কমিশনকে জানিয়েছেন, বিহারে যদি রোহিঙ্গা বাদ যায়, তবে এই বাংলা থেকেও রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাদ দিতে হবে। অন্যথায় বিজেপি প্রতিবাদে নামবে।

Suvendu Adhikari : পশ্চিমবঙ্গের নতুন লজ্জা , বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘ সন্ত্রাসবাদী ‘ আখ্যা ! মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা দাবি বিরোধী দলনেতার ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ: কেন্দ্রের দায় এবং বাঙালিদের আটক

ধর্মতলায় এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগের পাল্টা জবাব দেন। তিনি দাবি করেন, যদি অনুপ্রবেশ হয়ে থাকে তবে তার জন্য কেন্দ্র দায়ী, কারণ সীমান্ত বিএসএফের হাতে থাকে। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগের জবাবে মমতা বলেন, ৫৪০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার নেই এবং কেন্দ্র জমি চাইলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা দেননি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও অভিযোগ করেন যে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গোপনে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে বাংলাভাষীদের সন্দেহ হলেই ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখতে হবে। তিনি বলেন, “হাজারের কাছাকাছি লোককে আটক করেছে। বাংলাদেশে কত লোককে পুশব্যাক করেছে, সেই তথ্য এখনও নেই। সব জেলার লোককে আটক করছে। আমরাও ছাড়ব না।” মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি ঠিক করেছি বাংলায় বেশি করে কথা বলব। ক্ষমতা হলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখুন।”
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার লুকিয়ে লুকিয়ে নির্দেশিকা এনেছে, যা তারা চ্যালেঞ্জ করবে। মমতা যোগ করেন, “বাঙালিদের উপর অত্যাচার করতে দেব না। আপনারা কী ভেবেছেন, দেশের জমিদারি নিয়ে নিয়েছেন। যাকে মর্জি জেলে পাঠিয়ে দেবেন। মর্জিমতো বাংলা ভাষা বললেই বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছেন!”
মমতা জানান, বাংলার ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আধার কার্ড এবং আইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও বাঙালিদের আটক করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা কি ভারতের অংশ নয়?” সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়েও তিনি বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে বলেন, “রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি বলছেন! সীমান্ত কার হাতে? বিএসএফের হাতে। ট্রেন, প্লেনে কেউ এলেও সেটা দেখে কেন্দ্রীয় সরকার। আপনারা কেন মিথ্যা কথা বলছেন? বাঙালিদের উপর অত্যাচার কেন?”

Suvendu vs Mamata : পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবিতে রাজনৈতিক বিতর্ক !

বাস্তব চিত্র: কর্মসংস্থান এবং অনুপ্রবেশের জটিলতা

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পাঞ্চল এবং কর্মসংস্থানের অভাবে একটি বিপুল অংশের মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত অঞ্চল এবং শ্রেণী থেকেই প্রায় পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ন রাজ্যে কর্মরত। এতে রাজমিস্ত্রি থেকে তথ্যপ্রযুক্তির চাকরিজীবীও রয়েছেন – তাহলে প্রশ্ন হলো যে সমস্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালি শ্রমজীবী কি ভিন্ন রাজ্য থেকে বিতাড়িত? উত্তর না। বরঞ্চ ভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের নিজেদের বহু আঞ্চলিক আবাসিক বৃন্দ বা কমিটি আছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ পূর্ব থেকে পশ্চিম। কিন্তু সেই কমিটিগুলির সদস্য কেউই, বিতাড়িত হননি। তথাকথিত বিতাড়িত বাঙালির বেশিরভাগ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলগুলির বাসিন্দা – বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদা এবং মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের। এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে বেড়া দেওয়ার অভাবে অনুপ্রবেশ অতিরিক্ত। কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল এবং চোরাচালানকারিদের যোগে, একটি সম্প্রদায় বিশেষ ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীর ভারতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হয়ে রয়েছে যা সমস্ত নষ্টের মূলে। কর্মসংস্থান এবং অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা যতদিন পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা হয়ে থাকবে ততদিন বাঙালি জাতিকে রাজনীতির শিকার হতে হবে গোটা ভারতে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার – যে দায়িত্ব নয়, দায় এড়ানো এবং দোষ চাপানো তার একমাত্র লক্ষ্য এই বিষয়ে। একটা যা হোক বাঙালি বিদ্বেষ সমীকরণকে তৈরি করার প্রচেষ্টা রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর