ব্যুরো নিউজ ১৫ জুলাই ২০২৫ : অর্থ পাচার তদন্তের অংশ হিসেবে আজ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরার স্বামী রবার্ট ভাদরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সূত্র অনুযায়ী, জিজ্ঞাসাবাদে ভাদরা ‘অসহযোগিতা’ করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের অস্ত্র ব্যবসায়ী সঞ্জয় ভান্ডারি ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ভান্ডারির সঙ্গে আর্থিক যোগসূত্রের জেরায় ‘এড়িয়ে যাওয়া’ উত্তর
ইডি সূত্রের খবর, ভাদরাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা হলেও তিনি এড়িয়ে যাওয়ার মতো জবাব দিয়েছেন। বিশেষ করে, ভান্ডারির সঙ্গে যুক্ত তার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে সরাসরি ব্যাখ্যা দিতে তিনি বারবারই এড়িয়ে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই মামলায় তার ভূমিকা আরও গভীর হওয়ার সাথে সাথে ইডি তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করবে।
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, যিনি কেরালার ওয়ায়ানাদ থেকে লোকসভা সাংসদ, তার সঙ্গে রবার্ট ভাদরা ইডির সেন্ট্রাল দিল্লি অফিসে উপস্থিত হন। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (PMLA) এর অধীনে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে, জুন মাসে বিদেশি ভ্রমণের কারণ দেখিয়ে ভাদরা দুটি ইডি-র সমন এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
Bihar ; ওয়াকফ আইন সংশোধন বিতর্কে তোষণবাদী কংগ্রেস-আরজেডি’কে জেডি(ইউ)র তীব্র আক্রমণ
ভাদরার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার প্রেক্ষাপট
এই জিজ্ঞাসাবাদ রবার্ট ভাদরার বিরুদ্ধে একাধিক অর্থ পাচার মামলার বৃহত্তর তদন্তের অংশ। এর মধ্যে ২০০৮ সালের হরিয়ানা এবং রাজস্থানের বিকানেরে জমি চুক্তি সংক্রান্ত কথিত অনিয়মের দুটি মামলাও রয়েছে।
লন্ডনের সম্পত্তি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ
বর্তমান মামলাটি সঞ্জয় ভান্ডারিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। অভিযোগ, ২০০৯ সালে ভান্ডারি লন্ডনের ১২ ব্রায়ানস্টন স্কোয়ারে একটি সম্পত্তি অর্জন করেন। ২০২৩ সালের ইডি-র চার্জশিটে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ভাদরার নির্দেশনায় সম্পত্তিটির সংস্কার করা হয়েছিল এবং সংস্কারের খরচ নাকি ভাদরা নিজেই বহন করেছিলেন।
ভাদরা অবশ্য বরাবরই লন্ডনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সম্পত্তির মালিকানা অস্বীকার করে আসছেন এবং এই অভিযোগগুলিকে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্প ও সম্পত্তি লেনদেনের বিস্তারিত
এই মামলাটি ২০০৮ সালের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে একটি PSU স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ারিং-কে একটি চুক্তি দিয়েছিল। স্যামসাং, সঞ্জয় ভান্ডারির দুবাই-ভিত্তিক সংস্থা স্যান্টেক ইন্টারন্যাশনাল এফজেডসি (Santech International FZC)-কে নিয়োগ করে এবং ২০০৯ সালের জুন মাসে প্রায় $৪.৯৯ মিলিয়ন অর্থ প্রদান করে।
একই মাসে, ভান্ডারি ভর্টেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের নামে লন্ডনের সম্পত্তিটি কেনেন, যা স্যান্টেক থেকে প্রায় £১.৯ মিলিয়ন পেয়েছিল। পরে, ভর্টেক্সের সমস্ত শেয়ার স্কাই লাইট ইনভেস্টমেন্টস এফজেডই (Sky Lite Investments FZE) নামক একটি দুবাই-ভিত্তিক সংস্থা অর্জন করে, যা সি. থাম্পির নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই সি. থাম্পি রবার্ট ভাদরার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
ইডি-র ইমেলগুলিতে নাকি ভান্ডারি, তার আত্মীয় সুমিত চাড্ডা, মনোজ অরোরা এবং ভাদরার মধ্যে সম্পত্তি সংক্রান্ত যোগাযোগ প্রকাশ পেয়েছে। ভাদরার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সম্পত্তির সংস্কারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং ঘন ঘন আপডেট চেয়েছিলেন।
‘রাউন্ড ট্রিপিং’ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ
ইডি সন্দেহ করছে যে পুরো অপারেশনটি ‘রাউন্ড ট্রিপিং’-এর একটি ক্লাসিক উদাহরণ। এতে ভুয়া চুক্তি এবং ঘুষের অর্থকে পরামর্শদাতা ফি হিসাবে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা পরে বিদেশি সম্পত্তি কিনতে ব্যবহার করা হয়। এই সম্পত্তিগুলি পরে বিক্রি করা হয়েছিল যাতে অর্থ বৈধ বলে মনে হয়।
সঞ্জয় ভান্ডারি ‘পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী’ ঘোষিত
আয়কর বিভাগের অভিযানের পর ২০১৬ সালে ভান্ডারি লন্ডনে পালিয়ে যান। সম্প্রতি দিল্লির একটি আদালত তাকে ‘পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী’ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও, একটি যুক্তরাজ্যের আদালত ভান্ডারির প্রত্যর্পণ মামলায় ভারতের সরকারের আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে, যার ফলে তার ভারতে প্রত্যাবর্তন সম্ভবত হবে না।
ভাদরার বক্তব্যের পর, ইডি শীঘ্রই ভান্ডারি মামলায় একটি সম্পূরক চার্জশিট জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা তদন্তকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। সংস্থাটির কাছে নাকি এমন নথি রয়েছে যা লেনদেন এবং লন্ডনের সম্পত্তির মালিকানায় ভাদরার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়।