Kashmir black day : Mamata vs BJP

ব্যুরো নিউজ ১৫ জুলাই ২০২৫ : জম্মু ও কাশ্মীর সরকার কর্তৃক ১৩ই জুলাইকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এর প্রতি সমর্থন, নতুন করে এক ঐতিহাসিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ১৯৩১ সালের এই দিনটিতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে এক সম্প্রদায় (কাশ্মীরি মুসলিম) এটিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করতে চাইলেও, অপর এক সম্প্রদায় (কাশ্মীরি পণ্ডিত) এটিকে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া এক বিভীষিকাময় দিন হিসেবে স্মরণ করে। এই বিতর্ক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চলছে তীব্র চাপানউতোর, যেখানে বিজেপি মমতার বিরুদ্ধে ‘ডগ হুইসেল পলিটিক্স’-এর অভিযোগ তুলেছে।

‘ইওম-এ-শহিদাম’: এক গনহত্যার ইতিহাস

১৯৩১ সালের ১৩ই জুলাইয়ের ঘটনাটি কাশ্মীরের ইতিহাসে ‘ইওম-এ-শহিদাম’ (শহিদ দিবস) নামে পরিচিত। এক বিশেষ সম্প্রদায়ের কাছে এটি মহারাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক। সেদিন শ্রীনগরের কেন্দ্রীয় কারাগারের নিকট আন্দোলনরত প্রায় ২২ জন নৈরাজ্যবাদী নিহত হয়েছিলেন মহারাজার সৈন্যদের গুলিতে। এই ঘটনাকে তাঁরা কাশ্মীরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখেন এবং দীর্ঘদিন ধরে এটি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল।

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বর্ণনায় ১৩ই জুলাই, ১৯৩১ আধুনিক কাশ্মীরের ইতিহাসে এক ‘কালো দিন’ হিসেবে চিহ্নিত।  সেদিন কাশ্মীরি মুসলমানরা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রতি তাদের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছিল। শ্রীনগর শহর ও এর উপকণ্ঠে কাশ্মীরি হিন্দুদের সম্পত্তি ও প্রাণের ওপর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার এক হতাশাজনক ও মনোবল ভেঙে দেওয়া দৃশ্য দেখা যায়। মনে করা হয়, বোমা এবং খাকারা উপত্যকায় ফিরে এসেছিল। মুসলিম রিডিং রুম পার্টির প্ররোচনা ও নির্দেশে মুসলিম দুষ্কৃতীরা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর তাদের ক্রোধ, উন্মত্ততা এবং উন্মাদনার শিকার করে। গুন্ডা এবং কাশ্মীরি পণ্ডিত-বিরোধী মুসলমানরা সেদিন অবাধে হিংসা চালায়। তারা বিশেষ করে শ্রীনগরের নিন্ম এলাকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দোকান এবং বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। জাইনা কদল এবং মহারাজগঞ্জ থেকে লুট করা জিনিসপত্র বিতরণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, সেদিন ছিল লুটপাটকারীদের দিন, আর প্রকৃত শহিদ ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। অসংখ্য কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করা হয় এবং অনেকেই আহত হন। কিংবদন্তি আছে যে, শ্রীনগর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাদগাম জেলার নাগাম তহসিলের কানিকোটে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। সেখানে প্রায় এক ডজন কাশ্মীরি পণ্ডিতের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়, লুটপাট করা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, এবং কোনো দোষ ছাড়াই বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে হিন্দু নারীদের অমূল্য লুট হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের উপর সহিংসতা, ধর্ষণ এবং অসম্মান করা হয়।

Kashmir : ৩০ বছর পর উলার লেকে ফুটল পদ্ম, কাশ্মীর উপত্যকায় ফিরল আশা ও সমৃদ্ধি

শেখ আবদুল্লাহর ভূমিকা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

মুসলিম রিডিং রুম গ্রুপের অন্যতম প্রধান, বাগ্মী, এবং আপাদমস্তক ফায়ারব্র্যান্ড কর্মী ছিলেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের উচ্চপদে প্রার্থী নির্বাচন ও নিয়োগের পদ্ধতিগত নির্দেশিকা নিয়ে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়তেন, যেখানে মেধার ভিত্তিতে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা মুসলিম প্রার্থীদের চেয়ে ভালো ফল করত। শেখ প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার প্রতি তার অসন্তোষ প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি এবং মসজিদগুলোতে মুসলমানদের বিশাল সমাবেশ ডেকে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে শ্রোতাদের বিদ্রোহে উঠতে প্ররোচিত করেন। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে, সামান্য স্ফুলিঙ্গেই রাজ্যকে অনিয়ন্ত্রিত অগ্নিশিখায় গ্রাস করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

মমতা বনাম বিজেপি: ‘ডগ হুইসেল পলিটিক্স’-এর অভিযোগ

জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের ১৩ই জুলাইকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্তকে বিজেপি এবং কিছু রাষ্ট্রবাদী সংগঠন বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি, এই বিদ্রোহ মহারাজার বিরুদ্ধে ছিল এবং এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের ধারণার পরিপন্থী। তাদের মতে, কাশ্মীরের ইতিহাসকে নতুন করে লেখার চেষ্টা হচ্ছে, যেখানে ‘দেশপ্রেমী’ এবং ‘বিদ্রোহী’র সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে এবং শহিদদের সম্মান করা উচিত। মমতার এই অবস্থানকে বিজেপি ‘ডগ হুইসেল পলিটিক্স’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিজেপির দাবি, মমতা সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করার জন্য এই ধরনের মন্তব্য করছেন এবং কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবকে উসকে দিচ্ছেন। অর্থাৎ পোষা সারমেয়দের একত্রিত করার জন্যে বাঁশির ব্যাবহারের ন্যায় উস্কানিমূলক রাজনীতি ।

বিজেপির নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন ভাষা ব্যবহার করছেন যা আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ মনে হলেও, নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর কাছে একটি বিশেষ বার্তা বহন করে। এই ক্ষেত্রে, বিজেপি মনে করছে মমতা তার মন্তব্যের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছেন।

পাহালগাম হামলায় FATF-এর তীব্র নিন্দা: ‘ অর্থায়ন ছাড়া এইরুপ সন্ত্রাস সম্ভব নয় ‘

জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেছে যে এটি জাতীয় সুরক্ষার জন্য ক্ষতিকর এবং দেশবিরোধী শক্তির হাতকে শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস মমতার পক্ষ নিয়ে বলেছে যে তিনি শুধুমাত্র শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কথা বলেছেন এবং এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।

এই বিতর্কের ফলে কাশ্মীর ইস্যু এবং জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এসেছে, যা দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৩১ সালের ১৩ই জুলাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ইতিহাস-ব্যাখ্যা ভবিষ্যতে আরও বিতর্কের জন্ম দেবে এই দিবসের উদযাপন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর