ব্যুরো নিউজ ১১ জুলাই:হরিয়ানার জাতীয় স্তরের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব—মাত্র ২৫ বছর বয়সে ১৮টি সোনার পদক জয়, ৫৭টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে উজ্জ্বল উপস্থিতি। বাবার হাত ধরেই টেনিস জগতে পা রাখা এই ক্রীড়াবিদের জীবন শেষ হল সেই বাবার গুলিতে। প্রশ্ন উঠছে—স্বপ্ন গড়ার মানুষটাই কেন হয়ে উঠলেন স্বপ্নভঙ্গের কারণ?
এই হত্যাকাণ্ড হয়তো তথাকথিত ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুনের ঘটনা
রাধিকার জন্ম ২০০০ সালের ২৩ মার্চ, গুরুগ্রামে। ছোট থেকেই টেনিসের প্রতি তার দারুণ আগ্রহ ছিল। বাবা দীপক যাদব সেই আগ্রহকে রূপ দিয়েছিলেন কঠোর পরিশ্রম, প্রশিক্ষণ আর ভালোবাসায়। শুধু খেলোয়াড়ি জীবনেই নয়, সম্প্রতি রাধিকা খুলেছিলেন নিজস্ব একটি টেনিস প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যেখানে শিশু-কিশোরদের শেখাতেন খেলার কৌশল। প্রশিক্ষণকেন্দ্র সফল হচ্ছিল, আর তাতেই হয়তো জন্ম নিচ্ছিল অশান্তির বীজ।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, রাধিকার খুনের প্রাথমিক কারণ হিসেবে ধরা হয়েছিল ইনস্টাগ্রামে রাধিকার রিল বানানোকে। জানা যায়, বাবা দীপক বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বহুবার নিষেধ করার পরও রাধিকা তার মতোই চলতেন। কিন্তু তদন্তে জানা গেছে, এটিই মূল কারণ নয়।
এর পর সামনে আসে আরেকটি কারণ—রাধিকার প্রশিক্ষণকেন্দ্র। পুলিশ সূত্রে খবর, দীপক চাইতেন এটি বন্ধ হোক। কিন্তু রাধিকা রাজি ছিলেন না। প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি ভালো চলছিল, এবং তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। অথচ দীপক তার আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে কটাক্ষ শুনতেন—“মেয়ের টাকায় খাচ্ছিস?” আত্মীয়, পড়শিদের এই মন্তব্যে দীপক প্রবলভাবে ব্যথিত হন। তদন্তে জানা গেছে, বিগত ১৫ দিন ধরেই তিনি মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন।
ঘটনার দিন—বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ রান্নাঘরে ছিলেন রাধিকা। হঠাৎই দীপক এসে তাকে লক্ষ্য করে পরপর পাঁচটি গুলি চালান। তিনটি গুলি লাগে রাধিকার বুক ও পিঠে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
তবে এতকিছুর পরও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। একজন বাবা, যিনি মেয়েকে ক্রীড়াঙ্গনে পৌঁছে দিয়েছেন, যিনি তার প্রতিটি পদক্ষেপে সঙ্গ দিয়েছেন, তিনি হঠাৎ এতটা চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন কেন? প্রশিক্ষণকেন্দ্র নিয়ে বিরোধ থাকলে তা এত দিন কেন প্রকাশ পেল না?
পুলিশের একাংশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ড হয়তো তথাকথিত ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুনের ঘটনা। কারণ রাধিকার স্বাধীনচেতা মনোভাব, নিজের সিদ্ধান্তে চলা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি দীপকের কাছে ‘সম্মানের হানি’ বলে মনে হতে পারে।
ঘটনার সময় রাধিকার মা মঞ্জু যাদব বাড়িতে ছিলেন না। তিনি জ্বরের কারণে বিশ্রামে ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
তদন্ত এখনও চলছে। তবে এই ট্র্যাজিক পরিণতির পেছনে যে বাবার আঘাত করা মানসিকতা, সামাজিক চাপে গড়ে ওঠা এক বিষাক্ত অহংবোধ, এবং পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।